আলমাস হোসাইন:
ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নে এক বিএনপি নেতার দাপটে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুবেল শেখ নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং তার অনুমতি ছাড়া কোনো নির্মাণকাজ, এমনকি পানি বা বিদ্যুৎ সংযোগও করা যাচ্ছে না।
“৫০ হাজার টাকা না দিলে পানির লাইন নয়”
বাড়ইপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, তিনি আগে থেকেই জমিতে দুইতলা ভবন নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি পানি সংযোগ নিতে গেলে বাধার মুখে পড়েন।
তার ভাষায়, “রুবেল শেখ সরাসরি এসে কাজ বন্ধ করে দেন। বলেন, ৫০ হাজার টাকা না দিলে পানি লাইন বসানো যাবে না। ভয় দেখানো হয়েছে, কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ হয়ে আমরা তো চরম বিপদে আছি।”
একাধিক ভুক্তভোগীর অভিন্ন অভিযোগ
স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দা একই অভিযোগ করেছেন। তবে অনেকে নিরাপত্তার আশঙ্কায় নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাদের মতে, রুবেল শেখ নিজেকে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন। “চাঁদা না দিলে ঘর তুলতে পারবেন না, পানি-বিদ্যুৎ সংযোগও মিলবে না”—এমনটাই জানান তারা।
দলের ভেতরেও অসন্তোষ
স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, রুবেল শেখ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব খাটাচ্ছেন। একজন নেতা বলেন, “আমরাও তার আচরণে বিব্রত, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারি না।”
অভিযোগ রয়েছে, একসময় এলাকায় সশস্ত্র চাঁদাবাজি চালানো যুবলীগ ক্যাডার সুমন পলাতক হওয়ার পর থেকেই রুবেল শেখ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি নিয়মিত সুমনকে চাঁদার অংশ পাঠান বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
অভিযুক্ত রুবেলের দাবি: “সবই ষড়যন্ত্র”
অভিযোগ অস্বীকার করে রুবেল শেখ বলেন, “এসব কাজের সঙ্গে আমি জড়িত নই। একটি মহল রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে।”
সুমনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, “আমি কেবল সুমনের সন্তানের পড়াশোনার খরচ দিই। এর বাইরে কোনো সম্পর্ক নেই।”
পুলিশের অবস্থান
আশুলিয়া থানার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
বিএনপির আশ্বাস
শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজির মতো কাজে জড়িত থাকে, আমরা তা গুরুত্ব সহকারে দেখব। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্য এক নেতা যোগ করেন, “ব্যক্তিস্বার্থে দলের নাম ব্যবহার করা হলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।”
সচেতন মহলের আশঙ্কা
স্থানীয় সুশীল সমাজ বলছে, রাজনৈতিক পরিচয়কে হাতিয়ার করে চাঁদাবাজি শুধু মানুষের জীবনকে অস্বস্তিকর করে তুলছে না, বরং সমাজে অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা প্রশাসন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।