খুলশীতে হামলার অভিযোগে নতুন মোড়

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের খুলশীতে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাকে ঘিরে নতুন মোড় নিয়েছে। ভুক্তভোগী দাবি করা নারী নয়ন মনি প্রকাশ লালি (৩২) আসলে ঘটনাটিকে উল্টোভাবে সাজিয়েছেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নয়ন মনি নিজেকে আওয়ামী সরকারের আমলে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং সেই পরিচয়কে ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক পরিচয় ও নারীর আবেগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিয়মিত চাঁদাবাজি ও দখলদারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এলাকাবাসীর দাবি, নয়ন মনি ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন। এমনকি দোকান ও বসতভিটা দখলের জন্যও চাপ সৃষ্টি করেছেন। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অভিযোগ উঠলেও নারী হওয়ার কারণে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে অনেকেই সাহস পাননি।

ঘটনার দিন রাতেও ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলার আগেই নয়ন মনি ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এলাকায় শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। পরে প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজের পক্ষের কয়েকজনকে সামান্য আহত করে ঘটনাটিকে বড় আকারে উপস্থাপন করা হয়। আহতদের তালিকায় ঘনিষ্ঠ আত্মীয় থাকার কারণে ঘটনাটির নাটকীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এদিকে মামলার খসড়ায় নাম থাকা যুবদল নেতা সাদ্দাম প্রকাশ শিবিরের সাদ্দামসহ অন্যান্যরা দাবি করেছেন—এটি সম্পূর্ণ সাজানো অভিযোগ। সাদ্দাম বলেন, “আমরা কোনো হামলার সঙ্গে জড়িত নই। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এবং নিজের দখলকৃত দোকান ও সম্পত্তিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নয়ন মনি পরিকল্পিতভাবে আমাদের নাম জড়িয়েছেন।”

স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, নয়ন মনি একাধিক মামলার আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করেন এবং পরে পরিস্থিতিকে নিজের মতো সাজিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার করেন। এতে প্রকৃত দোষীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছেন, আর সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, কোনো নারী অপরাধে জড়িত হলে তাকে অনেক সময় ভুক্তভোগী সাজানো হয়। এ ঘটনাতেও সেই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ এখনও কোনো মামলা রেকর্ড করেনি। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একপক্ষের অভিযোগ শোনার পাশাপাশি পাল্টা অভিযোগও গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও পরিবর্তিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এখন আওয়ামী লীগের পূর্বের মতো প্রভাব খাটানোর সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ব্যবহার করলেও বর্তমানে তারা উল্টো চাপে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে তাদের প্রভাবও অনেকটা কমে গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রমাণ-আধারেই ব্যবস্থা নেব। ভুক্তভোগী পরিচয়ে কেউ যদি উল্টো অপরাধে জড়িত থাকেন, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”

অতএব, নয়ন মনি প্রকাশ লালির ভুক্তভোগী হওয়ার দাবি এখন প্রশ্নবিদ্ধ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষ তদন্তেই প্রমাণিত হবে—তিনি প্রকৃতপক্ষে আক্রমণের শিকার, নাকি ঘটনাটির মূল পরিকল্পনাকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *