সুমন মিয়া :
বান্দরবানের রুমা উপজেলা সম্প্রীতিকে কেন্দ্র করে পরিচিত একটি উপজেলা। সেখানে নবগঠিত প্রেসক্লাবকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ আট বছর পর কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূর্ণ গঠন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন মহল। অনেকের মতে, নতুন কমিটি কেবলমাত্র কাগজে-কলমে গঠিত হলেও এর গ্রহণযোগ্যতা এখন মহা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, রুমা প্রেসক্লাব ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এটি সাংবাদিকদের ঐক্য ও পেশাগত সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করলেও প্রায় আট বছর ধরে কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। এ সময়ে নিয়মিত সভা, সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কিংবা গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনো প্রক্রিয়া হয়নি। সম্প্রতি কিছু উদ্যোগী মহল নতুন করে কমিটি ঘোষণা করে, যা মহা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিতর্কের মূল কারণ ছিলো—নতুন কমিটি ঘোষণার আগে কোনো উন্মুক্ত সভা বা সাধারণ সদস্যদের মতামত গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করা অনেক সাংবাদিককে বাদ দিয়ে কিছু নবাগত বা নির্দিষ্ট মহলের ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক।
সদস্য ও নেতৃত্ব বাছাইয়ে ভোট বা মতামত নেওয়ার কোনো উদ্যোগ না থাকায় “গণতান্ত্রিক বৈধতা” নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া স্থানীয় সূত্রের দাবি, কমিটি গঠনে কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের প্রভাব ছিল। রুমার কিছু সাংবাদিক জানিয়েছেন, “কমিটি ঘোষণায় স্বচ্ছতা ছিল না। যারা মাঠে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে একদল মানুষ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রেসক্লাবের মতো একটি অরাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র সংগঠনকে ঘিরে যদি পক্ষপাতদুষ্টতা দেখা দেয় তবে সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকেই পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।
এই বিষয়ে রুমা উপজেলার রুমা বার্তা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নাইন্দিয়া ভান্তে ফোনে বলেন, “বিষয়টা বেশ দুঃখজনক। মিলেমিশে যেকোনো সংগঠন গড়ে উঠলে সংগঠনের মান বজায় থাকে। স্থানীয় সব সাংবাদিকদের নিয়ে মিলেমিশে প্রেসক্লাব গঠনের জন্য আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম। কোনো প্রেসক্লাবকে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনর্গঠন করতে হয়। এতে সকল কর্মরত সাংবাদিককে ভোটাধিকার দিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব বাছাই করলে সংগঠনের প্রতি আস্থা ফিরে আসে।”
দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার প্রতিনিধি পিপলু বলেন, “আমি নিজেও রুমা উপজেলার একজন স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক। অথচ ওদের নবগঠিত রুমা প্রেসক্লাবে আমাকে রাখা হয়নি। কমিটি গঠনে নিশ্চিতভাবেই পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই আমি এই কমিটি ভেঙে নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠনের দাবি করছি।”
দৈনিক ইংলিশ পত্রিকা অবজারভার-এর রুমা প্রতিনিধি উবাচিং মার্মা বলেন, “আমি সিনিয়রদের কথার বাইরে যেতে পারবো না। ওনারা যা বলেন তাই। নবগঠিত রুমা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।”
দৈনিক কালের কণ্ঠ রুমা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম বলেন, “বিষয়গুলো নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। এটি সিনিয়রদের বিষয়।”
কোষাধ্যক্ষ মংহাই থুই মার্মা বলেন, “বর্তমান রুমা প্রেসক্লাবের সভাপতি শৈহ্লাচিং মার্মার আচরণ ভালো নয় এবং তিনি সর্বক্ষণ স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করেন। আমি এসব বিষয়ে কথা বলার কারণে বান্দরবানে জনসম্মুখে অনেক গালাগালি খেয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। একজন সাংবাদিক একইসাথে মানবাধিকার কর্মীও। সুতরাং একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের এমন দুঃখজনক আচার-আচরণ কাম্য নয়। প্রেসক্লাব গঠনের সময় আমি সকল সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে কী কারণে বা কারা বাদ পড়লো, তা আমার জানা নেই।”
এ বিষয়ে সভাপতি শৈহ্লাচিং মার্মাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি রুমার সব সাংবাদিকদের একত্রে প্রেসক্লাব গঠন করতে চেয়েছিলাম। তাই গঠনের দিন পিপলুকে বহুবার কল দিয়েছিলাম, মাসুদকে তার বাড়ি পর্যন্ত খুঁজতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে না পেয়ে কিছুটা নিরাশ হয়েছিলাম। তাই তখন নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি। তবে যারা বাদ পড়েছেন তারা চাইলে আবেদন করে রুমা প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারবেন।”
বান্দরবান জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি এন.এ. জাকির বলেন, “রুমা প্রেসক্লাব গঠন নিয়ে আমরা কোনো অফিসিয়াল চিঠি পাইনি, তবে মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছিল। প্রতিটি জেলা-উপজেলার প্রেসক্লাব একটি স্বাধীন সংগঠন। এসব সংগঠনে স্থানীয় সাংবাদিকরা সবাই মিলেমিশে থাকা ভালো। আর বাদপড়া স্থানীয় সাংবাদিকদের আবেদন করে দেখা উচিত।”
যে কোনো প্রেসক্লাব স্থানীয় সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রতীক হওয়ার কথা থাকলেও রুমায় নবগঠিত কমিটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে মহাবিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়। এখন দেখার বিষয়—সংগঠনটির নেতৃত্ব বিতর্ক উপেক্ষা করে টিকে থাকে নাকি সমালোচনার মুখে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হয়।