আশুলিয়ায় গোডাউন তৈরিতে বাঁধা ও লুটপাটের অভিযোগ

আলমাস হোসেন:
ঢাকার আশুলিয়ায় কনস্ট্রাকশন ফার্মের নির্মাণ সামগ্রী রাখার গোডাউন তৈরিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মো. জসিম উদ্দিন। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি জানান, একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মের নির্মাণ সামগ্রী রাখার গোডাউন তৈরিতে বাধা ও লুটপাটের বিষয়ে জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- আশুলিয়ার ডেন্ডাবর নতুন পাড়া এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন (৫০), আশুলিয়ার মির্জানগর ঢাকা কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির আব্দুল করিম মৃধার ছেলে মো. হাবিবুর রহমান (৫৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. সাইদি (২৫), আশুলিয়ার কুরগাঁও নতুনপাড়া এলাকার মৃত শামছুল হকের ছেলে আব্দুল জব্বার (৫০), আশুলিয়ার ডেন্ডাবর ফাল্গুনী হাউজিং এলাকার আমিনুল হকের ছেলে মো. মঞ্জু মিয়া (৫০), একই এলাকার আলী আকবর (৪৮), নিরিবিলি এলাকার রানা (৩০), কুরগাঁও বটতলা এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে রবিউল (৩৫), বাইশমাইল প্রস্তাবিত নহর ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির সাবেক আনসার ক্যাম্প কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর (৫৫), নিরিবিলি স্বরনিকা আনসার ক্যাম্পের সাবেক এপিসি মো. রবিউল (৫০) সহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন।
ভুক্তভোগী জসীম উদ্দিন জানান, আশুলিয়ার উত্তর রামচন্দ্রপুর মৌজার সিএস ও এসএ-১৮, আরএস-৪৮, বিআরএস খতিয়ান নং- ১৬৩, ১৬৪ জমির পরিমাণ ৩৪৫ শতাংশ আমি ক্রয়, হেবা ও ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হয়ে ভোগদখলে আছি। এই জমিটিতে আমি একটি পাকা বিল্ডিং, একটি সেমি পাকা বিল্ডিং, ২০টি রুম ও দোকান নির্মাণ করে এবং প্রস্তাবিত ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরী, কুটির শিল্প (ঝাড়ু তৈরীর কারখানা), সিমেন্টের ইট তৈরীর কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত আমার এসব সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখলের পায়তারাসহ বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগী আরও জানান, আমি গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন ১ম শ্রেণীর ইমারত ঠিকাদার। উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য তফসিল ভূক্ত ৩৩ শতাংশ সম্পত্তির ভিতর এমএস খুটি, লোহার এ্যাঙ্গেল ও টিন দ্বারা গোডাউন নির্মাণ কাজ চলছে। আমি নির্মাণ কাজ শুরু করার পর হতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক সম্রাট বিল্লাল ও আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি হাবিবের নেতৃত্বে সকল অভিযুক্তরা আমার নির্মাণাধীন গোডাউন নির্মাণ করতে দিবে না এবং উক্ত সম্পত্তিতে আমাকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগ দখলে থাকতে দিবে না মর্মে হুমকি প্রদান করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে অভিযুক্ত বিল্লাল ও হাবিবের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার সম্পত্তিতে অবৈধভাবে অনধিকার প্রবেশ করে আমার নির্মাণ কাজে নিয়োজিত লেবার ও মিস্ত্রিদের মারপিট করে নীলাফুলা জখম করে এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে গোডাউন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। আমি প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে মারপিট করতে উদ্যত হয় এবং খুন জখমের হুমকি প্রদান করে। এসময় তারা নির্মাণকৃত ওয়াল ভাংচুর করে ৬ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এছাড়া ১০টি ইট তৈরীর মেশিন, নির্মাণ কাজের জন্য আনা ৪০ বান ঢেউ টিন ও ৫০ বস্তা শাহ সিমেন্ট লুটপাট করে একটি নাম্বার প্লেট বিহীন ট্রাক যোগে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, এর আগেও জসিম উদ্দিনের নির্মাণকৃত বাড়ি-ঘর ভেকু দিয়ে রাতের আঁধারে ভাংচুর করে গুঁড়িয়ে দেন হাবিবগং। সেসময় তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে মামলা দায়ের হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিল্লাল-হাবিব চক্র। মূলত বিল্লাল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু প্রকৃতির লোক। সে জমির ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংস্কারের সময় রড, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী চুরির দায়ে প্রথম মামলা হয়েছিল। এরপর আশুলিয়াসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানায় বিল্লালের নামে মাদক, হত্যা, ডাকাতির প্রস্তুতি, চুরি ও মারধরের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আশুলিয়া থানায় ২০০৬ সালের আলোচিত বাদশা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি, ২০১১ সালে একই থানায় রয়েছে চুরি ও প্রাণনাশের মামলা, ২০১৪ সালে সবুজবাগ থানায় কর্মচারী দিয়ে মোটরসাইকেল চুরিসহ প্ররোচনার মামলা, ২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা ও ২০১৮ সালে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় মাদক মামলা।
এছাড়া আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে ভূমি দখল, ভাংচুর, লুটপাট, হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিল্লাল-হাবিবসহ তাদের সন্ত্রাসী চক্রের ভয়ে এলাকাবাসী ভীতসন্ত্রস্ত। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ একাধিক ভুক্তভোগী তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, গোডাউন নির্মাণ কাজে বাঁধা ও লুটপাটের বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *