গানে গানে সংস্কারের কথা বলেন সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সাংবাদিক আল হেলাল

মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার :

সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সাংবাদিক দৈনিক খবরপত্র প্রতিনিধি আল হেলাল মোঃ ইকবাল মাহমুদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। এখনও বৈষম্যের শিকার শিল্পী ও সাংবাদিক সমাজের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে লড়াই সংগ্রামে মাঠে রয়েছেন তিনি। ভাটির জনপদে ভোটের মাঠে বরাবরই জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা আল হেলাল। পেশায় সার্বক্ষনিক সাংবাদিক ও বাউল শিল্পী তিনি। সুনামগঞ্জের সাংবাদিকদের শীর্ষস্থানীয় দুটি সাংবাদিক সংগঠন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির বিগত ৪টি নির্বাচনে একাধারে ২ বার করে মোট ৪ বার একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রতিবারই নির্বাচনে তার প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বী থাকে।

শেষরাতে তাকে পরাজিত করতে ব্যয় করা হয় কালো টাকা। কিন্তু কোনবারই তাকে আটকাতে পারেনি ষড়যন্ত্রকারীরা। প্রিয় সহকর্মীরা তাকে সবসময় হৃদয়ের কোনায় পরম ভালবাসায় অতি সচেতন ও যতœ সহকারে লালন করে থাকেন। এবার ভোট পলিটিক্সে পলিসি ম্যাকার হিসেবেও নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। শুধু নিজেই নেতা হননি একজন নেতা তৈরীর কারিগরও তিনি। প্রতিটি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন ও বিজয়ে নিশ্চিত ভূমিকা পালন করেন।

সাংবাদিকতার জীবনে কখনও কোন গডফাদার ধরতে হয়নি তাকে। বরং অনেক গডফাদারকে নাকানি চুবানি খাইয়েছেন তিনি। সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের আতংক এই সংবাদকর্মীর মূল সম্বল হচ্ছে তার বক্তৃতা,কথা,গান ও লেখনি। জীবনে অনেক মামলা মোকদ্দমার আসামী হলেও তাকে সংবাদ প্রকাশের জন্য আজোবদি কোন দন্ডাদেশ এর মুখোমুখি হতে হয়নি। রাষ্ট্র ও সরকারের আইন বিধি বিধান ও প্রচলিত নিয়ম কানুনকে সমুন্নত রেখে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে সঠিক শব্দ ও বাক্য প্রয়োগে তিনি সবসময়ই পান্ডিত্যের স্বাক্ষর রাখেন। অসহায় গরীব নিরীহ সাংবাদিকদের বিপদে আপদে আগলে রাখেন তিনি। আবার ভূয়া ও প্রতারক সাংবাদিকদের মুখোশ উন্মোচনেও তার ভূমিকা স্পষ্ট থাকে।
আল-হেলাল বাংলাদেশের মরমী সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার জগতে একটি সাড়াজাগানো নাম। তার পিতার নাম এস.এন.এম মাহমুদুর রসুল যিনি একজন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার মাতার নাম মরহুমা রোকেয়া বেগম চৌধুরী। তার স্থায়ী ঠিকানা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভরারগাঁও গ্রাম। বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে বসবাস করেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব সুলতানপুর আবাসিক এলাকায়।

তিনি ১৯৯০ সালে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি,১৯৯২ইং সালে দিরাই কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৯৪ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকার জাতীয় আইন কলেজে অধ্যয়ন করেন। আল-হেলাল ইতিপূর্বে বাংলাভিশন টেলিভিশন,ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক খবর,দৈনিক প্রাইম, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার,ইংরেজী দৈনিক আওয়ার টাইম,দৈনিক মুক্তকন্ঠ,দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা,দৈনিক মাতৃভূমি,দৈনিক মানবজমিন,দৈনিক প্রভাত,দৈনিক সোনার আলো,দৈনিক খবরপত্র,দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ,দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার,জাতীয় সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা,সাপ্তাহিক বর্তমান দিনকাল,সাপ্তাহিক স্বর্ণালী ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক দৈনিক যুগভেরী, দৈনিক সিলেটবানী,দৈনিক সংলাপ,দৈনিক মানচিত্র,দৈনিক জালালাবাদ,দৈনিক প্রভাতবেলা,সাপ্তাহিক পরিক্রমা,সাপ্তাহিক সময়ের ডাক,সাপ্তাহিক সিলেটের পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে,জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ সংবাদ এর জেলা প্রতিনিধি,সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ বার্তা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক,দৈনিক আলোকিত সুনামগঞ্জ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও সাপ্তাহিক গ্রাম বাংলার কথা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ তিনি রাষ্ট্র পরিচালিত জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক হিসেবে গড়ে তুলেন বাউল কল্যাণ পরিষদ ও বাউল কামাল পাশা স্মৃতি সংসদ নামের ২টি সাংস্কৃতিক সংগঠণ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সিলেট বিভাগ গণদাবী পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য,জাগো সিলেট আন্দোলন এর প্রচার সম্পাদক,সিলেটস্থ সুনামগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সংস্থার সহ সম্পাদক,দিরাই থানা উন্নয়ন ও পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক,দিরাই থানা উন্নয়ন ও ঘুষ দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক,ধর্ম ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক, ঘুষ দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন সুনামগঞ্জ এর দিরাই থানা আহবায়ক,দিরাই প্রেসক্লাবের আহবায়ক,দিরাই-শাল্লা সাংবাদিক পরিষদ এর সভাপতি,মফস্বল সাংবাদিক সংগ্রাম পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক,সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি,দিরাই প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক,সিলেট বিভাগ মফস্বল সাংবাদিক সংগ্রাম পরিষদ এর আহবায়ক,বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বাউল দল সুনামগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক,বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি,কালনী বেতার স্রোতা ক্লাব এর সভাপতি,জেলা গীতিকার ফোরাম এর সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ সুনামগঞ্জ এর সাধারন সম্পাদক,কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ শাখার নির্বাহী সদস্য,জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি এবং সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অধিষ্টিত রয়েছেন। কর্মরত রয়েছেন জাতীয় দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে। তিনি কোয়ান্টাম ল্যাব শান্তিনগর ঢাকার আজীবন রক্তদাতা ও বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্ত্রের তালিকাভূক্ত একজন পল্লীগীতি শিল্পী। তার সম্পাদনায় সম্প্রতি প্রকাশ হতে যাচ্ছে সাপ্তাহিক মুক্তির সনদ ও সাপ্তাহিক হীরামন মানিকের দেশে নামে আরো দুটি পত্রিকা।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে ১০১টি গান নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন “গানের সম্রাট কামাল উদ্দিন”নামে একখানা গীতিগ্রন্থ। পরবর্তীতে “শ্রেষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত”,“রাজনীতির রবার্টব্রæস মতিউর রহমান”,“ভোটযুদ্ধে মমতাজ ইকবাল” “মডেল মানুষ মমিনুল মউজদীন” ও সুনামগঞ্জের সোনার মানুষ মুহাম্মদ আব্দুল হাই”সহ আরো অনেক জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে গানের স¤্রাট বাউল কামাল পাশার শত শত গান নিয়ে পত্রিকা সম্পাদনা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেন তিনি।
একজন গীতিকার হিসেবে তিনি রচনা করেছেন প্রায় শতাধিক গান।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীতে বেপরোয়াভাবে বালি পাথর লুটতরাজের প্রতিবাদে “ধোপাজান নদীরে তুমি খবর জাননি,তোর বুকে রইয়াছে কত বালি পাথর খনি” শিরোনামে তাৎক্ষনিকভাবে একটি গান লিখে ও গেয়ে জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ সহকারে ফেইসবুক লাইভ করে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ সংরক্ষণে গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেন তিনি। আল-হেলাল ২০১৪ ইং সনের ৩রা জুন সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলা এলাকার সদরপুর নামক স্থানে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন।

একজন পেশাদার সাংবাদিক ও বাউল শিল্পী হিসেবে সরকার তাকে বাউল শিল্পীর স্বীকৃতিসহ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। ২০২৪ সালের ৪ঠা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সুনামগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনের সামনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রাস্তায় পুলিশের বেপরোয়া নিক্ষেপিত কাঁদানে গ্যাসে চোখ ও মুখ ঝলসে যায় তার। একজন ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে লাঠিচার্জে আহত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রলাণয়ের সরকারী ওয়েবপোর্টালে তার কেইস আইডি নং ৩৪৭২২।
ডিগবাজীর রাজনীতির মাঠে আল হেলালের কোন দখল না থাকলেও একজন সৎ সাহসী নির্ভিক সাংবাদিক হিসেবে তিনি সাড়া জেলা জুড়ে আলোচিত ও অত্যধিক জনপ্রিয়। তিনি ইতিপূর্বে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ সভাপতি পদে ২ বার প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে সাংবাদিকদের ব্যালটভোটে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। জেলা শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের মূলধারার সংগঠন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমানে নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বরত অবস্থায় ২১ ডিসেম্বরের সর্বশেষ নির্বাচনে আবারও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি।
একান্ত সাক্ষাতকালে সাংবাদিক আল হেলাল বলেন,আমি সাংবাদিক ভাইদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

তারা একবার নয় দুবার নয় এ পর্যন্ত ৪ বার আমাকে নিজেদের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত করেছেন। আমি সুনামগঞ্জের সকল সাংবাদিক ভাইদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ আছি এবং সবসময় তাদের পাশে থাকবো। তিনি তার সহকর্মী সকল বিজয়ী সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানান এবং পরাজিত প্রার্থীদের সমবেদনা জানিয়ে বলেন,আগামীতে এবারের পরাজিত সহকর্মীদের বিজয়ে আমার অগ্রণী ভূমিকা থাকবে। আল হেলাল বলেন,পেশার মধ্যে আমি কোন গ্রুপিং সংঘাত চাইনা। নেতৃত্বের শ্রেণিবিন্যাস ও বিকেন্দ্রীকরনে অবদান রাখতে চাই। বর্তমান সাংবাদিকতায় চাদাবাজ,সন্ত্রাস ও চাঠুকারিত্বের অবসান ঘটাতে চাই।

গডফাদার কেন্দ্রিক পোষ্য সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে মূলধারার সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সাম্প্রতিক রাষ্ট্র সংস্কার ও চলমান ইস্যু নিয়ে আল হেলাল বলেন,একজন গীতিকার ও বাউল শিল্পী হিসেবে আমি সংস্কারের পক্ষেই কথা বলবো।

যেকথা অনেক আগেই বলে গেছেন সুনামগঞ্জের ৫ প্রধান লোককবির মধ্যমণি গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন)। দেহতত্ত্ব নিয়ে গান গাইতে গিয়ে কবি গেয়েছেন, পরিস্কারে রেখো মন তোর দেহ ভান্ড ঘর/ যে বান্ধিল ওই ঘরখানা তারনি তুই রাখছ খবর।। তন পরিস্কার মন পরিস্কার,ঘর দরজা সব পরিস্কার/ পরিস্কার তোর শহরও বন্ধর।পরিস্কারে আল্লাহ রাজী যেজন তোমার দেহের কাজী,নাটমন্দিরে লইতেছে খবর।। থাক তুই রিপুর অধীনে ক্ষতি করে রাত্রদিনে/লুঠ করতে চায় ভাঙ্গিয়া কেওর। সময় থাকতে লাগাও তালা রেখনা দরজা খোলা,দূরে যাবে ছয় ডাকাইতের ডর।। আমি যে মালিকের অধীন ভাবিয়া কয় কামাল উদ্দিন,তার কাছে নালিশ কর সত্বর। হবে বিষয় সংশোধন তথায় আছে প্রশাসন/বন্ধন করে নিয়ে যাবে তাদেরে আইনের ঘর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *