কচুর মুখি খেয়ে বড় হওয়া রফিকুল এখন সফল উদ্যোক্তা

গাংনী প্রতিনিধি:

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর গ্রামের রফিকুল ইসলামের জীবনের গল্প যেন এক সংগ্রামের মহাকাব্য। এক সময় যিনি কচুর মুখি খেয়ে জীবন পার করেছেন, স্কুলে যেতে হয়েছে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে—আজ তিনিই সফল একজন উদ্যোক্তা। মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নতুন জীবনের পথে।

ছোটবেলা থেকেই অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। বাবা-মা ও চার ভাইবোনের সংসার চালানোর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা। সরকারি খাস জমির জীর্ণ কুটিরে বড় হওয়া রফিকুলের বাবা নড়বড়ে একটি ওয়েল্ডিংয়ের দোকান চালাতেন। বাবার হাত ধরেই ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শেখা শুরু করেন রফিকুল। কিন্তু দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে পারেননি তিনি।

শিক্ষাজীবন শেষ করার পরও অভাব রফিকুলের পিছু ছাড়েনি। বাবার অবসরের পর বড় ভাই দোকানের হাল ধরেন, আর রফিকুল সেখানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এভাবেই দিন কাটতে থাকে, কিন্তু সংসারের চাহিদা বাড়তে থাকে দ্বিগুণ হারে।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বদলে গেল জীবন

সংসারের এই দুঃসময়ে আশার আলো হয়ে আসে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের দক্ষতাভিত্তিক উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প। স্থানীয় ইমাম সাহেবের মাধ্যমে তিনি ফাউন্ডেশনে একটি ওয়েল্ডিং দোকানের জন্য আবেদন করেন।

ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার দক্ষতা যাচাই করা হয়। দেখা যায়, তিনি ওয়েল্ডিংয়ের আধুনিক বিভিন্ন কাজ জানেন—ভুট্টা ও ধান ভাঙানোর মেশিন, খড় কাটার মেশিন তৈরি করতে পারেন। স্টিলের ফার্নিচার ও অন্যান্য মেশিনারিজ তৈরিতেও তিনি পারদর্শী।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফাউন্ডেশন তাকে ব্যবসা শুরু করার মূলধন হিসেবে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়। এই অর্থ দিয়ে তিনি স্থানীয় বাজারে একটি দোকান ভাড়া নেন এবং প্রয়োজনীয় মেশিন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন।

একজন কর্মচারী থেকে উদ্যোক্তা

বর্তমানে রফিকুল ইসলাম তার নিজের দোকান চালু করেছেন এবং কাজও পেতে শুরু করেছেন। তিনি এখন আর কারো দোকানে কর্মচারী নন, বরং একজন সফল উদ্যোক্তা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তার ব্যবসা আরো প্রসারিত হবে এবং তিনি কমপক্ষে তিনজন দরিদ্র মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারবেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন,
“কখনো ভাবিনি আমার নিজের একটা দোকান হবে। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সহায়তা না পেলে হয়তো এখনো অন্যের দোকানে কাজ করে যাচ্ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন ভালো আছি।”

তার এ সাফল্য প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি ও সুযোগের সমন্বয় ঘটলে দারিদ্র্য কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। রফিকুল ইসলামের গল্প এখন অনেক তরুণের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *