
স্টাফ রিপোর্টার:
নজরদারি না থাকায় নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর সব বাজারে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। ব্যবহৃত ওইসব পলিথিনের আশ্রয়স্থল হচ্ছে ময়লার ভাগাড় ও জলাশয়। এসব পলিথিন শেষ পর্যন্ত মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। এছাড়া যত্রতত্র পলিথিন পুড়িয়ে ফেলার কারণেও পানি, বায়ু ও মাটি দূষিত হচ্ছে।
সরেজমিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ির থানার পাশ্বেই মৎস্য ও কাঁচা-বাজার,আরতে সর্বত্রই নিষিদ্ধ ছোট, বড়, মাঝারি পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে রয়েছে হাতলসহ ও হাতল ছাড়া পলিথিন ব্যাগ। প্রকাশ্যেই আইন ভঙ্গ করে ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাত ও বিপণিবিতাণগুলোতেও প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করে চলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
অথচ দেখার যেন কেউ নেই। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ির মংস্য ও কাচা বাজারে অবাধে সোহেল, রাসেল, আব্দুল মালেক, ইব্রাহিম ও নুরম্নল ইসলাম গংরা দোকানে পলিথিন ব্যাগ সাজিয়ে অবাধে পাইকারি বিক্রি করছে। এটা যে অবৈধ তা তারা মানতেই চায় না। এ বিষয় পলিথিন বিক্রেতারা বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ এই কথা সবাই জানে , আবার পলিথিন ছাড়া একে বারেই চলা যায় না।
পলিথিন যদি নিষিদ্ধ না হতো তাহলে আমাদের ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হতো না। এখন পলিতিন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে পদে পদে ঘুষ দিতে হয় যার কারনে আমাদের লাভ একটু কম। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে টাকা দিলে সবই পাওয়া যায়। পলিথিনের টাকা প্রশাসনের সর্বস্তরের পৌছায় সুতারং পলিথিন কখনো বন্ধ হবে না। পরিবেশ উপদেষ্টা চেষ্টা করেছিল কই বন্ধ করতে পারে নাই। এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের দাবি, রাজধানীসহ আশপাশের সব এলাকায় পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
এর ফলে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার অনেকটা কমে আসবে। পলিথিনের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতে জনসচেতনতা ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণেও কাজ চলছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু বাস্তবের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। অভিযান হলেও মোটেও থেমে নেই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। শুক্রবার শনিআখরা বাজার ও বৌ বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সব দোকানেই বিক্রেতারা পলিথিনে ভরেই পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও পলিথিনে করেই নিচ্ছেন।
মূলত, পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণেই দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকা ওয়াসার মতে, শুধু ঢাকায় ১০০ কোটি পলিথিন ব্যাগ ভূপৃষ্ঠের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে মাটির নিচেও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন স্তর, যা ভূপৃষ্ঠে স্বাভাবিক পানি ও অক্সিজেন প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। জমির শস্য উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করছে। পলিথিন পোড়ালে বায়ু ও মাটি দূষিত হয়।
পলিথিন ব্যাগ মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আর রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠকে ক্রমাগত উত্তপ্ত করে তুলে। ইউনেস্কোর তথ্য মতে, প্রতি বছর ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি প্লাস্টিক দূষণের কারণে মারা যায়। এক লাখ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে মারা যায়। পরিবেশবিদদের মতে, পলিথিন তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। পলিথিন এমন একটি পণ্য, যা মাটির সঙ্গে মিশতে আনুমানিক দেড় হাজার বছর সময় লাগে। পরিবেশ অধিদফতর সহ প্রশাসন যদি ইচ্ছে করে এবং সেই মাফিক কাজ করে তবেই বন্ধ হবে পলিথিন ব্যবহার।