সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রদল নেতার হত্যাকাণ্ড ঘিরে ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এ ঘটনার বিচারে গুরুত্ব দেওয়ার চেয়ে ঢাবি ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ চাওয়ার ঘটনায় নেটিজেনদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাদিকুর রহমান খান তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘সাম্যর লাশের ছবি নিয়ে আওয়ামী লীগ সেলিব্রেট করছে। ৩ দিন আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবরে সাম্য আলহামদুলিল্লাহ পড়েছিলো। সেই স্ক্রিনশট নিয়ে আওয়ামী লীগাররা আনন্দ করছে। এই খুনকে ওরা দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে যতই বিভাজন করি, আওয়ামী লীগের আমাদের মারার সময় কোনো দলে ভাগ করে মারবে না। এই কঠিন সময়ে বিপ্লবের পক্ষের শক্তিরা এক থাকতে না পারলে, আমাদের ভাই সাম্যর পরিণতি আমার আপনার জন্যও ওয়েট করছে সামনে।’

সাখওয়াত জাকারিয়া লিখেছেন, ‘সাম্য ভাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে পুরো ক্যাম্পাস যখন উত্তাল তখন হঠাৎ ছাত্রদল দাবি তুললো ঢাবির ভিসি-প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। কেন ভাই? ক্রাইম সিন কি ক্যাম্পাসে? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কি প্রক্টরের অধীনে?’

এইচ এম ইমরান নামের একজন লেখেন, ‘পুলিশের আগেই সাম্য হত্যার আসামি ধরে ফেললো আবু বাকের মজুমদার (বাগছাস নেতা)? সকলেই যখন লাশ নিয়ে ব্যস্ত তখন এত তাড়াতাড়ি বাকেরের হাতে ২ জন আসামি কীভাবে ধরা পড়লো? এটা কিন্তু গভীর প্রশ্ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবখানেই কি ক্রেডিট নিতে হবে বাকের ভাই? শিক্ষার্থীর লাশ নিয়ে ক্রেডিটের রাজনীতি না করলে হয় না? পোস্ট তো ডিলিট করেছেন, সঙ্গে নিজের আইডিটাও ডিজেবল করে দিয়েছেন।’

শিমুল পারভেজ লেখেন, ‘এই প্রিয় ক্যাম্পাসে তথা উদ্যানে রাত দুপুরে কি না হয়? মাদকের আড্ডা, ব্যবসা, ইয়াবার জোগান এমনকি রাত বারোটার পরে নাকি প্রকাশ্যে পতিতাবৃত্তি হয়ে থাকে! ৫ আগস্টের আগে এটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতো ছাত্রলীগ, আগস্টের পর পট পরিবর্তনের কারণে কারা নিয়ন্ত্রণ করে বলে আপনি মনে করেন? ছাত্রশিবির, গণঅধিকার, ছাত্রশক্তি, ইসলামী আন্দোলন নাকি অন্য কেউ? যাইহোক ছাত্রদলের নাম বললাম না কারণ তারা এতোটাই সাধু যে এগুলো করার কথা না!’

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং তদন্ত শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় ঢাবি ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে।

এদিকে, সাম্য হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বিরোধী মত দমন করতে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি করছে।’

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করবে।’

সাম্য হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মানুষজন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *