কামরুল ইসলাম:
চট্টগ্রামের বহু প্রতীক্ষিত কালুরঘাট সড়ক ও রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তবে উদ্বোধনের ফলকে নজর কাড়ে একটি ব্যতিক্রম—সেখানে নেই কোনো ব্যক্তির নাম, নেই কোনোরকম আত্মপ্রচার। এই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তই আজ ‘নিউ নর্মাল’-এর সূচনা বলেই মনে করছেন অনেকেই।
রাষ্ট্রের অর্থে নির্মিত কোনও স্থাপনাতে ব্যক্তিগত বাহাদুরি বা নাম ফলকে জায়গা হওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। অথচ আমরা দেখেছি, যেখানেই যাই—ভবন থেকে টয়লেট, ফুটপাত থেকে ফ্লাইওভার—সবখানে কোনো না কোনো নেতার নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারি অর্থে কেনা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের বাসেও বড় অক্ষরে লেখা থাকে, “অমুক মহানেতার অনুদানে প্রাপ্ত।”
বাস্তবতা হলো, এসব কিছুই তাঁদের ব্যক্তিগত অর্থে নয়—রাষ্ট্রের টাকা, জনগণের পয়সায় করা হয়েছে। তবুও যেন একধরনের রাজনৈতিক দখলদারিত্ব চলে প্রতিটি প্রকল্পের ওপর।
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারের সবচেয়ে বড় শক্তি সম্ভবত এখানেই—তাঁরা দেখাতে চাচ্ছেন কীভাবে নিরপেক্ষ, অহংবিমুক্ত প্রশাসন দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরে কোনো নাম না থাকা একটি প্রতীকী বার্তা বহন করে—রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন হোক জনতার, দলীয় নয়; কাজের কৃতিত্ব হোক দেশের, ব্যক্তির নয়।
এখন সময় এসেছে, এই ধারাটিকেই আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির অংশ করে তোলার। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের গায়ে একক কোনো ব্যক্তির নাম না থাকে, তার বদলে লেখা থাকে—“জনগণের অর্থে, জনগণের কল্যাণে নির্মিত।” এটাই হোক আমাদের নতুন পরিচয়।
যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদে নিজেদের নাম জুড়ে দিয়ে গর্ব করেন, ইতিহাস তাঁদের ভিন্ন চোখে দেখবে না। আর যাঁরা নীরবে কাজ করেন, জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন—তাঁরাই হয়ে থাকবেন প্রকৃত নায়ক।