পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ ইদ্রিস, পিতা আতাহার আলী মল্লিক, এক সময় ছিলেন একজন সাধারণ শ্রমিক। তবে সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে তার জীবনের গতিপথ। এখন তিনি জমি ও প্রতিষ্ঠান দখল করে গড়ে তুলেছেন একচ্ছত্র প্রভাব এবং আধিপত্য, জড়িয়ে পড়েছেন একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
ইদ্রিস মূলত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করে থাকেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এটি তার একমাত্র ‘পেশা’ এবং দীর্ঘদিন ধরেই এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বিগত সরকারের আমলে তৎকালীন সংসদ সদস্য এনি রহমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। এরপর ২০২৪-২৫ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, ইদ্রিস নিজের রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে বিএনপি নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অনিয়ম ও অপরাধ।
মাদক ও জমি দখল চক্রের হোতা
স্থানীয়রা জানান, ইদ্রিস মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি তিনি এলাকায় বিভিন্ন মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছেন। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের পর এসব ঘটনা বাড়তে থাকে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদাবাজি ও জবরদখলের একাধিক অভিযোগ।
কিশোর গ্যাং ও অপহরণ কাণ্ড
ইদ্রিস এলাকায় উঠতি বয়সী ছেলেদের নিয়ে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি, চুন্নু শিকদার নামের এক ব্যক্তির ১৬/১৭ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানান, মেয়েটিকে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে গা ঢাকা দেন ইদ্রিস। কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে মেয়েটির পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরিও করতে পারেনি। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ইদ্রিস অস্বীকারের চেষ্টা করছেন।
স্ত্রী জানেন না স্বামীর প্রকৃত ব্যবসা
ইদ্রিসের স্ত্রী পলী বেগম, দুই সন্তানের জননী, সাংবাদিকদের বলেন,
“আমার স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করে, ঠিক কী ব্যবসা তা আমি জানি না। একটা মেয়ে নিয়ে চলে গেছে, শুনেছি। পুরুষ মানুষ দুই-তিনটা বিয়ে করতেই পারে।”
এলাকা জুড়ে ক্ষোভ
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“ইদ্রিস আগে আওয়ামী লীগ করতেন, এখন বিএনপি’র পরিচয়ে সব অপকর্ম চালাচ্ছেন। তিনি প্রতিনিয়ত জনগণকে ভয় দেখান এবং প্রভাব খাটিয়ে নানা অন্যায় করে চলেছেন।”
দাবি ও প্রশাসনের ভূমিকা
এলাকাবাসীর দাবি, মোঃ ইদ্রিসকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধারে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।
উল্লেখ্য, মোঃ ইদ্রিসের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।