স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
বিগত সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চার ধরনের পরিণতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য উপস্থাপন করেন।
বিচারপতি মইনুল জানান, গুমের শিকারদের মধ্যে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আবার অনেককেই বিচারের আগে মিডিয়ার সামনে জঙ্গি তকমা দিয়ে বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাছাড়া কিছু মানুষকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও অনেক অপরাধী এবং তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এর ফলে প্রমাণ ধ্বংস, প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা রকম ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবুও অনেক ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন এবং গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গত বছর গঠিত হওয়ার পর থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৬টি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া, কমিশনে দাখিল করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের আইজিপি বরাবর ১৩১টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে ১৮৫০ অভিযোগের মধ্যে থেকে ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যাদের জন্য নিকটাত্মীয়ের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি, ফৌজদারি মামলা ও সংবাদ প্রতিবেদন রয়েছে। এসব ভুক্তভোগী রাষ্ট্রীয় হেফাজতে গোপন আটক ছিলেন এবং তারা একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
বিচারপতি মইনুল বলেন, “এই ২৫৩ জনের অভিজ্ঞতা একটি সাংগঠনিক ও পদ্ধতিগত কাঠামোর অস্তিত্ব নির্দেশ করে। বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার একটি হাতিয়ার ছিল।”
তিনি আরও জানান, কমিটির কাছে দাখিলকৃত অভিযোগের ৮১ শতাংশ জীবিত ভুক্তভোগীদের, বাকী ১৯ শতাংশ ফিরে না আসা ভুক্তভোগীদের পরিবারের। এবারের প্রতিবেদনে গুম থেকে ফেরত আসেনি এমন ১২ জনের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে দায়ীদের শনাক্ত করা হয়েছে।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি দুইটি সুপারিশও করেছে। প্রথমত, সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অপব্যবহার রোধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দ্বিতীয়ত, বর্তমান কাউন্টার টেরোরিজম পদ্ধতির ত্রুটি নিরসন করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ বিশ্বব্যাপী হুমকি হলেও এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাষ্ট্রের সততা, মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার এবং আইনগত প্রক্রিয়া মেনে চলা আবশ্যক। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করে।