দীর্ঘ এক যুগ যাবৎ যাত্রাবাড়ীতে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন ৪ ফুট ৮ ইঞ্চির মাদক সম্রাট মাসুম

স্টাফ রিপোর্টার:


ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকা যাত্রাবাড়ী। কিন্তু এই জনবহুল এলাকার ধলপুর সিটি পল্লী যেন এখন রাজধানীর মধ্যেই এক ‘মাদকের শহর’। এখানে হিরোইন, ইয়াবা, গাঁজা, মদ—কী নেই! প্রতি মোড়ে মোড়ে, অলিতে-গলিতে, এমনকি চায়ের দোকান আর সাধারণ ঘরবাড়িতেও চলে মাদকের প্রকাশ্য লেনদেন ও জুয়ার আসর। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার মাদক সম্রাট মাসুম।

একটি ওয়ার্ডজুড়ে গড়ে উঠেছে মাদক বিক্রির হাট। সিটি করপোরেশনের নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের বসবাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই এলাকার দুটি বিশেষ অঞ্চল—সিটিপল্লী ও আউটফল—এখন মাদকসেবীদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক কেনাবেচা হয় যার নেতৃত্বে আছেন মাসুম।

প্রশাসনের চোখের সামনে গড়ে উঠেছে অপরাধ সাম্রাজ্য:
সরেজমিনে দেখা যায়, মধ্যবয়সী এক নারী অন্য এক ব্যক্তির হাতে একটি প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা এক পথচারী বলেন, “এই দৃশ্য এখানে খুব স্বাভাবিক। প্রতিদিন এমন শত শত লেনদেন হয়। পুলিশ আসলেও সাময়িক সময়ের জন্য থেমে যায়, পরে আবার আগের মতোই শুরু হয়।”

যুবসমাজ ধ্বংসের পথে, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা:
মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে না পেরে অনেক যুবক জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই, চুরি, রাহাজানি ও সহিংসতায়। স্থানীয়দের বক্তব্য, “আগে সন্ধ্যার পর বাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হতাম, এখন ভয়ে বের হই না। খালি আতঙ্ক আর আতঙ্ক।”

সশস্ত্র বাহিনী ও মাসোহারায় টিকে থাকা মাসুম:
সূত্রে জানা গেছে, মাসুম প্রায় অর্ধশত সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চলাফেরা করেন। তার এই শক্তির উৎস স্থানীয় কিছু অসাধু নেতা, যাঁদের মাসোহারা দিয়ে তিনি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাসুমের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তার বাহিনী নির্যাতন চালায়।

ডিবি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা:
সম্প্রতি মাস দুয়েক আগে ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের একটি দল মাসুমের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে তার লাঠিয়াল বাহিনী ডিবির ওপর হামলা চালিয়ে তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত মাসুম ধরা পড়েননি।

মিডিয়ায় একাধিক প্রতিবেদনেও নেই সাড়া:
মাসুমের বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ের একাধিক সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। কথিত আছে, মাসুম প্রতিদিন যাত্রাবাড়ী থানায় লাখ টাকারও বেশি ঘুষ দিয়ে থাকেন, ফলে আজও তার নামে কোনো মামলাও হয়নি।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চলছে মাদক বাণিজ্য:
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরুতে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন পরিস্থিতি বদলে অনেকেই বিএনপি বা জামায়াত সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছেন। মাসুম একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে আরেকটি দলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত। একজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দল বদলায়, কিন্তু মাদকের ব্যবসা তো থামে না।”

থানা পুলিশের বক্তব্য:
যাত্রাবাড়ী থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কারা জড়িত তা শনাক্তে তথ্যদাতাদের মাধ্যমে অনুসন্ধান চলছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাব। ডিসি স্যার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন, বড় অভিযানের প্রস্তুতিও নিচ্ছি।”

তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়:
বছরের পর বছর ধরে যেখানে অবাধে চলছে এই ভয়াবহ অপরাধ, সেখানে থানা পুলিশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বাস্তব প্রয়োগ কোথায়? স্থানীয়রা বলছেন, “এতবার বলেছি, সাংবাদিকরাও লিখেছে, তারপরও কিছু হলো না। আমাদের ওয়ার্ড যেন এখন মাদকের হাট।”

(চলবে…)
পরবর্তী পর্বে প্রকাশিত হবে মাসুমের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ ও তার সহযোগীদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *