কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আওতাধীন ‘পর্যটন সেল’ বর্তমানে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত। সমুদ্রসৈকতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ কার্ড বিতরণ নিয়ে গড়ে উঠেছে এক দালাল সিন্ডিকেট, যা পর্যটন শিল্পের সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সরকারি নীতিমালার আলোকে চেয়ার, টিউব, ক্যামেরা, ঘোড়া, বীচ বাইক, ফিশ ফ্রাই ও ঝিনুক ব্যবসায়ীদের বৈধতা দিতে পর্যটন সেল থেকে রাজস্ব নির্ভর কার্ড ইস্যু করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি কার্ড ইস্যু এবং নবায়ন প্রক্রিয়ায় ঘুষ, প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ ও দলীয় প্রভাবের মাধ্যমে শত শত কার্ড বিতরণের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের শুরুতে প্রায় ৪০০-৫০০টি কার্ড ইস্যু করা হয়েছে, যার মধ্যে পুরাতন ২০০টি নবায়ন এবং নতুন করে আরও ২০০টির বেশি বিতরণ করা হয়। এক একটি কার্ড পেতে গুণতে হয়েছে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ।
বহিরাগত দখলদারিত্ব ও স্থানীয়দের বঞ্চনা
জানা যায়, প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বরাদ্দের পরিবর্তে এসব কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রভাবশালী বহিরাগতদের হাতে। এমনকি প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত কোটা সরাসরি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বেকার যুবকরা বছরের পর বছর আবেদন করে কোনো সাড়া পাননি, অথচ রাজনৈতিক ‘চিঠি’ বা ‘লোক দেখানো তালিকা’ দেখিয়ে বহিরাগতরা সহজেই কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন।
সিন্ডিকেটে জড়িত প্রশাসন ও রাজনৈতিক চক্র!
এই অনিয়মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। কার্ড এখন আর সরকারি নীতির আলোকে প্রাপ্যতা নির্ধারণের বিষয় নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে বাজারে কেনাবেচার পণ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে কিছু বহিরাগতদের নামে ইস্যুকৃত কার্ডের ছবি ভাইরাল হলে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জনগণের দাবি:
-
কার্ড বাণিজ্যের দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
-
স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে স্বচ্ছ ও ন্যায্য কার্ড বিতরণ চালু করতে হবে।
-
প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই এই দুর্নীতির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।