সুমন খান:
রাজধানীর মিরপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস, যেখানে প্রতিনিয়ত আনাগোনা হাজারো মানুষের। অথচ প্রতিদিন গড়ে দলিল রেজিস্ট্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত। এই অফিসে যতো বড় কোটিপতিই আসুক না কেন, দৈনিক ৬০ টাকা হাজিরার উমেদার ফজর আলীকে সালাম ঠুকতেই হবে—তা না হলে দলিল করতে আসা কোটিপতিদের চোখের জল, নাকের জল এক হয়ে যাবে।
এর মূল কারণ হলো, মিরপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে মৃত নুর ইসলামের ছেলে উমেদার ফজর আলী যোগদানের পর থেকেই গড়ে তুলেছেন বিশাল এক দলিল বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। তাকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে সাব রেজিস্ট্রারের কথিত সহকারী সবুজ।
মিরপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যে কেউ দলিল করতে এলে, এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই করতে হবে। তা না হলে দলিল আটকে দিয়ে বিভিন্ন মনগড়া ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। এসব অনৈতিক কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মহাধুর্ত উমেদার ফজর আলী।
একজন দলিল লেখক জানান, বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানির এমডিদের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। ফলে ঐসব হাউজিংয়ের দলিল হয় গোপন চুক্তিতে, ফজর আলীর মাধ্যমে। লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় পতিত ডোবা-নালা বা ধানী জমির নামে। এভাবেই শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারকে বোকা বানিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৬০ টাকা হাজিরার উমেদার ফজর আলী ও সবুজ হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।
নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়—ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি-বাড়ি থেকে শুরু করে সবই আছে তাদের। কোটি কোটি টাকা লগ্নি করেছেন বিভিন্ন ব্যবসায়। এখন ফজর নিজেই একটি ডেভেলপার কোম্পানি খোলার স্বপ্নে বিভোর। উমেদার থেকে রাতারাতি হয়ে যেতে চান এমডি বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
ফজর-সবুজের পকেটে চুক্তি অনুযায়ী টাকা গুঁজে দিতে পারলেই আধা ঘণ্টার মধ্যে সব সমস্যার সমাধান—নামজারি, খতিয়ান, ডিসিআর, খাজনার রসিদ, ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র—সবই হয়ে যায় চোখের পলকে।
এই ঘুষ বাণিজ্য করে ফজর আলী মিরপুর শাহ আলীবাগ ধানক্ষেত মোড়ে ৪৬/৪ নম্বর বাড়িতে কয়েকটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, আর বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফজর আলী ২৩/০৩/২০১৭ তারিখে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দেন। এরপর থেকেই যেন তার হাতে এসে পড়ে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ—যা চাইছে, তা-ই মিলছে! এক টিভি সিরিয়ালের মতোই, স্বপ্নের মতো বাস্তবে কোটিপতি বনে যান এই উমেদার ফজর আলী।