বিআইডব্লিউটিএ-তে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব আলী এখনো বেপরোয়া!

স্টাফ রিপোর্টার:

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের খালাতো ভাই পরিচয়দানকারী বিআইডব্লিউটিএ-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আইয়ুব আলীর দাপট পতিত সরকারের পতনের পরেও কমেনি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী শাসনামলে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার বাণিজ্য, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ড্রেজিংসহ রাজস্ব বাজেটভুক্ত প্রায় সব খাতে গডফাদারের ভূমিকা পালন করেন।

আইয়ুব আলী নিজের পছন্দসই ঠিকাদারদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ দিয়েছেন। সম্প্রতি তাকে কয়েকজন ঠিকাদার মারধরও করলেও, তার বেপরোয়া আচরণে কোনো ভাটা পড়েনি। বিআইডব্লিউটিএ’র ভেতরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি এখনো কার্যত কর্তৃত্ব চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, আইয়ুব আলী সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং শেখ হাসিনার এপিএস শেখরের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুযোগে ড্রেজার ও জলযান মেরামতের কাজ, নতুন প্রকল্প অনুমোদন, এমনকি বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়নকৃত প্রকল্পেও শত শত কোটি টাকার টেন্ডার একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন এবং বিল ভাগাভাগি করেন।

দুদকে জমা অভিযোগে বলা হয়, তিনি স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের নামে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ঢাকার রায়েরবাজার, জিগাতলা এলাকায় ফ্ল্যাটসহ দেশ-বিদেশে রয়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এমনকি লন্ডন ও নিউইয়র্কেও বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমার কোনো বিদেশি সম্পত্তি নেই। এসব মিথ্যা তথ্য, আমাকে হয়রানি করার জন্য ছড়ানো হচ্ছে।”

আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে ওঠা আরও গুরুতর অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • নারায়ণগঞ্জে বিআইডব্লিউটিএ গোডাউনে নিজের লোক দিয়ে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে পরে বিএনপি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ঘাড়ে দোষ চাপানো।

  • বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পে ড্রেজিং সংক্রান্ত দুইটি বড় প্রতিষ্ঠানের (কর্ণফুলী ও বঙ্গ ড্রেজার্স লিমিটেড) কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়া।

  • ঠিকাদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিল ভাগাভাগি করে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ।

  • সরকার পতনের দিন (৫ আগস্ট) বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে নৌ প্রতিমন্ত্রীকে ব্যবহার করে ৩০০ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন করিয়ে নেওয়া এবং ওইদিনই ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইয়ুব আলী ছিলেন পতিত সরকারের “ড্রেজিং সাম্রাজ্যের রাজা”। তিনি যান্ত্রিক বিভাগে চাকরি করার সুবাদে ক্রয়, মেরামত ও অপচয়ের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করে গেছেন।

দুদকের একজন পরিচালক জানিয়েছেন, “আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছায়া থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন এসব দুর্নীতির দায়ভার তার একার নয়, এতে জড়িত রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা।”

বিআইডব্লিউটিএ-এর অভ্যন্তরে যারা সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন, তারা দাবি তুলেছেন—দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের সম্পদ জব্দ ও শাস্তির আওতায় আনা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *