স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর উপবিভাগীয় সহকারী হিসাবরক্ষক মোঃ সালাউদ্দিন এখন গণপূর্তের দুর্নীতির প্রতীক। বেতন স্কেল মাত্র ২০ হাজার টাকা হলেও, মাসিক আয় প্রায় ২০ লাখ টাকা বলে অভিযোগ রয়েছে। চলাফেরা করেন বিলাসবহুল মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের গাড়িতে। গত দুই দশক ধরে দপ্তরে কার্যত “দাপটের রাজত্ব” চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সালাউদ্দিন মাসে মাত্র এক-দুই দিন অফিসে এসে পুরো মাসের হাজিরায় স্বাক্ষর করে থাকেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে একই বিভাগে বহাল রয়েছেন। বদলির চারবার আদেশ হলেও রহস্যজনকভাবে তা কার্যকর হয়নি।
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, তিনি আলোচিত ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির অন্যতম নেপথ্য কারিগর ছিলেন। ফকিরাপুল এলাকার একাধিক ক্লাবে ক্যাসিনোর ব্যবসায় তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া জি কে বিল্ডার্সের মালিক জি কে শামীমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি হিসাব সহকারী হিসেবে কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার খেলায়ও যুক্ত ছিলেন। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভোলা জেলায় তিনি কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন দুটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি, ৪টি মাছের ঘের এবং কিনেছেন শত বিঘা জমি। ঢাকায় খিলগাঁওয়ের শহীদ বাগিচা এলাকায় ‘নিবাস’ নামে একটি ব্যয়বহুল চাইনিজ রেস্তোরাঁও পরিচালনা করছেন তিনি। মতিঝিল সরকারি কলোনিতে থাকা অবস্থায় কিনেছেন ৪টি ফ্ল্যাট, যেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেও এসব ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও জানা গেছে, সালাউদ্দিনের বড় ভাইয়ের নামে রয়েছে গণপূর্তের দ্বিতীয় শ্রেণির ঠিকাদারি লাইসেন্স, যার মাধ্যমে গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর অন্তত ৫০% কাজই পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের আমলে সহকারী হিসাবরক্ষকদের পদোন্নতির নামে সালাউদ্দিন কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বর্তমানে সালাউদ্দিন প্রধান প্রকৌশলী শামীম আহমেদের নাম ব্যবহার করে দফায় দফায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে ফেলেছেন। একটি প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে—মাত্র ২০ হাজার টাকার বেতনে থাকা একজন কর্মকর্তা কিভাবে শত কোটি টাকার মালিক হন?
দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতন মহল বলছে, এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।