স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
গত বছরের ঐতিহাসিক ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
উদ্বোধনী ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, “এটা শুধু স্মরণ নয়, বরং নতুন করে জাতি হিসেবে আমাদের জেগে ওঠার শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে দেশের যে বিস্ময়কর গণজাগরণ ও ঐক্য দেখা গিয়েছিল, সেটিই আমাদের শক্তির উৎস। সেই শক্তিকে নতুন করে সুসংগঠিত করতেই এই কর্মসূচির আয়োজন।”
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান শুধু ছাত্র-যুবকদের নয়, এটা ছিল দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত আত্মত্যাগের ফল। যারা নিজেদের জীবন দিয়ে গণতন্ত্রের পথ দেখিয়েছেন, তাদের রক্তের ঋণ শোধের একটাই উপায়—এই রাষ্ট্র যেন আর কখনো স্বৈরাচারের পায়ের নিচে না পড়ে।”
‘নতুন শপথের মাস’ হিসেবে উদযাপন হবে জুলাই
ড. ইউনূস জানান, মাসব্যাপী কর্মসূচির মূল প্রতিপাদ্য—”জনগণের হাতে রাষ্ট্র ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ”। কর্মসূচির অংশ হিসেবে থাকবে:
-
৬ জুলাই: শহীদদের স্মরণে জাতীয় শোক মিছিল
-
১০ জুলাই: “ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ দিবস” পালিত হবে
-
১৬ জুলাই: ‘আবু সাঈদ স্মরণে ছাত্র প্রতিরোধ সমাবেশ’
-
২১ জুলাই: গণজাগরণ দিবস ও নাগরিক সংলাপ
-
২৬ জুলাই: গণমাধ্যমে ‘জুলাই গণজাগরণ স্মারক সংখ্যা’ প্রকাশ
-
৩১ জুলাই: “অভ্যুত্থান জয়ন্তী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক আয়োজন”
তিনি বলেন, “জুলাই হবে প্রতিবারই একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক জবাবদিহির মাস। ভবিষ্যতের প্রজন্ম যেন জানে—স্বৈরাচার কখনো টিকতে পারে না।”
‘শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগই আজকের মুক্তি এনে দিয়েছে’
গত বছরের অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের নেতৃত্ব, আত্মত্যাগ এবং আন্দোলনের প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “যুবকরা কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়ায় নয়, বরং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই রাজপথে নেমেছিল। তারা শুধু দাবি তোলেনি, রাষ্ট্রের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের আত্মত্যাগেই আমরা আজ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথে এগোতে পেরেছি।”
তিনি আরও বলেন, “১৬ বছর ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, বঞ্চনা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, অস্ত্র নয়—মানবিকতা ও ন্যায়বোধই সবচেয়ে বড় শক্তি।”
‘রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠনের স্বপ্ন ছিল জুলাই বিপ্লবের গভীরে’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত বছরের অভ্যুত্থান ছিল শুধু একটি সরকারের পতন নয়; বরং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানোর শপথ। সেই পুনর্গঠন আজ শুরু হয়েছে। তবে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই প্রতিবছর এই সময়টিকে আমরা স্মরণ করব, উদযাপন করব, যাতে আবার কোনোদিন স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আজকের বাংলাদেশের পথ এখনও সহজ নয়। ষড়যন্ত্র চলছেই। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যখন জনগণ জেগে ওঠে, কোনো শক্তিই তাকে থামাতে পারে না। তাই এই জুলাই মাস হোক জনগণের ঐক্য ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক।”
‘ফ্যাসিবাদ-প্রতিরোধে আপসহীন থাকবে সরকার’
ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, “জুলাই আন্দোলনের মূল মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করছে। স্বৈরাচার আর যাতে ফিরে না আসতে পারে, তার সব প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ফ্যাসিস্ট শক্তি যতই ছদ্মবেশে থাকুক, আমরা তাদের চিহ্নিত করতে পারছি এবং প্রতিরোধ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আর কখনো সেই দিনে ফিরে যাবো না, যেখানে দিনের ভোট হয় রাতে, যেখানে কণ্ঠস্বর বন্দী হয় কারাগারে, এবং তরুণেরা রাষ্ট্রের হাতে নির্যাতিত হয়। এই প্রতিজ্ঞা থেকে আমরা একচুলও সরব না।”