স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
২০২৫ সালের সদ্য বিদায়ী জুন মাসে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৬৮৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৯৬ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১,৮৬৭ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৩ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে দুর্ঘটনা।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সংগঠনের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে এই মাসিক পর্যালোচনা।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শীর্ষে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই নিহত হয়েছেন ২২৮ জন। নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ২১ জন, রেলপথে ৫৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।
যানবাহনভিত্তিক বিশ্লেষণ
নিহতদের মধ্যে—
-
মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী: ২২৮ জন
-
বাস যাত্রী: ৬৩ জন
-
ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি প্রভৃতি যানবাহনের যাত্রী: ৫৪ জন
-
প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী: ২২ জন
-
সিএনজি ও থ্রি-হুইলার যাত্রী: ১৫১ জন
-
স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্র): ৪৪ জন
-
বাইসাইকেল ও রিকশা আরোহী: ১৪ জন
দুর্ঘটনার ধরণ
সর্বমোট ৬৮৯টি দুর্ঘটনার মধ্যে:
-
১৬৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ
-
৩০৬টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
-
১২৪টি পথচারীকে চাপা দেওয়া
-
৭৬টি যানবাহনের পেছনে ধাক্কা
-
১৬টি অন্যান্য কারণ
বিভাগভিত্তিক দুর্ঘটনা
-
ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক ২০২টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ১৮৭ জন
-
চট্টগ্রাম বিভাগে ১২০টি দুর্ঘটনায় নিহত ১১৩ জন
-
রাজশাহী ১০৫টি, রংপুর ৭২টি, খুলনা ৭১টি,
-
বরিশাল ৪১টি, ময়মনসিংহ ৫১টি,
-
সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২৫ জন
জেলা ভিত্তিক চিত্র
একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৯ জন।
সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়— ৬টি দুর্ঘটনায় নিহত মাত্র ১ জন।
রাজধানী ঢাকায় ঘটেছে ৬২টি দুর্ঘটনা, যাতে নিহত ২৪ জন, আহত ৮৭ জন।
দুর্ঘটনার কারণ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণে বলা হয়—
-
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও রাস্তা
-
বেপরোয়া গতি ও চালকের অদক্ষতা
-
ট্রাফিক আইন অমান্য করা
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া চালক পরিচালনা
-
বিআরটিএ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা
-
স্বল্পগতির যানবাহন মহাসড়কে চলাচল
-
চাঁদাবাজি ও অনিয়ম
সুপারিশ
প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়:
-
দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ জোরদার করতে হবে
-
চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ
-
বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়ানো
-
ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ
-
মহাসড়কে রোড ডিভাইডার ও সার্ভিস রোড তৈরি
-
চাঁদাবাজি বন্ধ
-
বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার (নৌ ও রেল) উন্নয়ন
-
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, “সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কেবল আইন প্রণয়ন নয়, বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।”