কামরুল ইসলাম:
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া কলেজ গেট থেকে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট পর্যন্ত প্রতিদিনই তীব্র যানজটে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও, দায়িত্ব পালনের চেয়ে চাঁদা আদায়ে বেশি মনোযোগী— এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চালক, যাত্রী এবং স্থানীয় জনসাধারণ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, দিনে-রাতে মিলে অন্তত ১২ ঘণ্টা এই রুটে যানজট লেগেই থাকে। অথচ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও, তারা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখছেন না। বরং অভিযোগ উঠেছে— ওই ট্রাফিক পুলিশ ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা (টিআই) দালাল চক্রের মাধ্যমে সিএনজি, টমটম, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন।
স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ চালকদের বক্তব্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দোহাজারী ও কেরানীহাট এলাকায় নানা সেক্টরে দুর্নীতি কিছুটা হ্রাস পেলেও, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বরং আরও বেড়েছে। আগে প্রতি গাড়ির জন্য ১ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকা আদায়ে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন দালাল চক্র।
সিএনজি ও টমটম সমিতির নেতারা জানান, অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের ধার্যকৃত চাঁদা না দিলে চালকদের অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হয়। হয়রানির ধরনও ভিন্নরকম— কখনো মামলা, কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার মতো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশ সদস্যরা।
এক ভুক্তভোগী চালক, নুরুল আলম, জানান, “আমার লাইট ক্যাটাগরির বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির সব কাগজ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ‘টোকেন সিস্টেমে’ অংশ না নেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশ আমার সিএনজি গাড়ি আটক করে। ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখে এবং শেষে ত্রি-হুইলার লাইসেন্স না থাকার অজুহাতে মামলা দেয়।”
এই বিষয়ে তদন্ত ও শক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে ট্রাফিক পুলিশের এক টিআই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “প্রতিদিন আমাকে বিভিন্ন সাংবাদিক ও সংগঠনের নেতাদেরও মানসিকভাবে চাঁদা দিতে হয়। তাহলে কি আমি নিজের বাড়ি থেকে টাকা এনে দেব?” প্রতিনিধির পাল্টা জবাবে তিনি আর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি।
এই অবস্থায় স্থানীয়রা সঠিক তদন্ত, কার্যকর ব্যবস্থা ও ট্রাফিক বিভাগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। যানজট নিরসন ও সুশৃঙ্খল যানচলাচলের লক্ষ্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।