বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৩৫% বাড়তি শুল্কের ন্যায্যতা চেয়েছে

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের বিষয়ে ন্যায্যতা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ মনে করছে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির তুলনায় এই শুল্কের হার অত্যধিক এবং এটি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের আঘাত হানবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘‘এ শুল্কের হার বাড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশি পণ্যের জন্য অযৌক্তিকভাবে ক্ষতিকর।’’ তিনি এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ন্যায্য আলোচনা চান।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐকমত্যের কিছু বিষয়

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ১০ জুলাই (স্থানীয় সময়) তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা শুরু হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাম্বাসাডর জেমিসন গ্রিয়ারের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটি একমত হয়েছে, তবে কিছু বিষয় এখনও মীমাংসিত হয়নি।

বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রপ্তানি পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাংলাদেশের পক্ষে এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক। গত বছর, বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮% ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪% আসে তৈরি পোশাক থেকে, এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার। গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬১৫ কোটি ডলারে।

শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি

শুল্কের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করছে। বিশেষ করে, ফুড অ্যান্ড ড্রিংক, বোয়িং বিমান এবং মিলিটারি ইকুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে আমদানি করা গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট এবং অন্যান্য মেশিনারির ওপর শুল্ক কম থাকলেও তুলার ওপর ২% এআইটি রয়েছে, যা তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক বৃদ্ধি ও পরবর্তী পদক্ষেপ

প্রেস উইং থেকে পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ট্রাম্প প্রশাসন গত সোমবার থেকে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের চিঠি পাঠিয়ে নতুন শুল্কের হার আরোপের কথা জানিয়েছে। এরই মধ্যে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, এবং বাংলাদেশসহ মোট ২১টি দেশের জন্য এই শুল্ক আরোপের নোটিফিকেশন পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক মজবুত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এসব শুল্কের বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং আশা করছে যে এই শুল্কের হার বাস্তবসম্মত ও ন্যায্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *