চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা ফাহিম বহিষ্কার, কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার: 

জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আওতাধীন যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসাথে, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি।

যুবদলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত
শনিবার (১২ জুলাই) যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, “দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে তার প্রাথমিক সদস্য পদসহ জাতীয়তাবাদী যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।”

বহিষ্কৃতদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “বহিষ্কৃতদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়ার পর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।”

ফাহিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরের অভিযোগ
এর আগে, যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের বাসগুলো ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গত তিন দিন ধরে বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাস কোম্পানির মালিক গ্রুপ এবং শ্রমিক নেতারা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

শরীয়তপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চকিদার বলেন, “যাত্রাবাড়ীতে যুবদলের কথিত নেতা ফাহিম শরীয়তপুরের সব বাস থেকে চাঁদা দাবি করেছে। এককালীন পাঁচ কোটি টাকা, নয়তো প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এর ফলস্বরূপ, গত তিন দিন ধরে কোনো বাস যাত্রাবাড়ী যাওয়ার অনুমতি পায়নি এবং সেখানে যাত্রী নিয়ে আসাও সম্ভব হয়নি। এতে শরীয়তপুরের মানুষের জন্য চরম ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।”

বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের ওপর হামলা
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বাস শ্রমিক জানান, “যাত্রাবাড়ী এলাকায় আমাদের শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের বাসগুলোর ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফাহিমের লোকজন হামলা চালিয়েছে। তিনদিনে আমাদের ২০-২৫টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন বাসচালক ও শ্রমিক আহত হয়েছেন।”

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফারুক তালুকদার জানান, “আমাদের বাস যাত্রাবাড়ী এলাকায় রাখা হতো। সেখানে ফাহিম নামের এক সাবেক যুবদল নেতা ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। টাকা না দেওয়ার কারণে আমাদের বাস সেখানে রাখতে বাধা দেয়া হয় এবং ভাঙচুর চালানো হয়। এর ফলে শরীয়তপুর জেলার হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছে।”

তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ
ফাহিমের বিরুদ্ধে এই নৃশংস ও বেআইনি কার্যকলাপের কারণে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, যুবদলের নাম ব্যবহার করে যারা এই ধরনের অপকর্ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান
বহিষ্কৃত ফাহিমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তীব্র আহ্বান জানিয়েছে যুবদল। দলীয় নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের সংগঠন কোনোভাবেই এই ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না এবং এর বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট।

এদিকে, জাতীয়তাবাদী যুবদলের পক্ষ থেকে শাস্তির আওতায় আনতে তারা যেকোনো প্রয়াস চালাতে প্রস্তুত এবং দাবি করেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক।

শেষ কথায়
দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যুবদলের এই কঠোর অবস্থান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত এলাকাবাসীর মধ্যে একটি আশার সঞ্চার করেছে। তবে, এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা এখনো দেখা বাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *