অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান রোধে সজাগ থাকার আহ্বান যুবদল সভাপতির

হাসান আলী:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না অভিযোগ করেছেন যে, তরুণদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতি আকর্ষণ ও জনপ্রিয়তার বৃদ্ধি দেখে একটি গোপন সংগঠন উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে যেন কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

শনিবার (১২ জুলাই) সকালে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে মিটফোর্ডে যুবদল কর্মী সোহাগকে প্রকাশ্যে দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে মোনায়েম মুন্না সহ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুবদল ও ছাত্রদল তাদের বক্তব্যে সোহাগ হত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং এই ধরনের বর্বরতা, যা একেবারে সভ্য সমাজের জন্য অগ্রহণযোগ্য, তা বন্ধ করার দাবি জানান।

এ সময় মোনায়েম মুন্না উল্লেখ করেন, সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে যাদের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য বা রহস্য রয়েছে কি না, তা তদন্ত করা উচিত। যুবদল সবসময় দায়িত্বশীল রাজনীতি বিশ্বাস করে এবং কোনো ঘটনার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বলেও জানান তিনি।

খুলনায় যুবদল কর্মী হত্যার পর প্রশাসনের নীরবতা ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ

এছাড়া, খুলনায় যুবদল কর্মীকে রগ কেটে হত্যা করার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুবদল সভাপতি। তিনি বলেন, “রগ কাটা রাজনীতির ইতিহাস একটি নির্দিষ্ট দলের। এসব ঘটনার পেছনে প্রশাসনিক ব্যর্থতা রয়েছে এবং সরকার এসব ঘটনা সম্পর্কে নীরব রয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।”

মোনায়েম মুন্না আরও বলেন, “গত ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৬ বছরের নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুন, সোয়া লাখ গায়েবি মামলা ও ফ্যাসিবাদী নিষ্পেষণের পর আমরা মুক্তি পেয়েছি। এই দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিপদের মুখে জীবন-যাপন করলেও কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যায়নি। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় জীবন বাজি রেখে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে।”

গণঅভ্যুত্থান ও শহীদের আত্মত্যাগ

তিনি আরও বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের সফলতার পর আমাদের দল কোনও ক্রেডিটের নেশায় মোহগ্রস্ত হয়নি। আমরা শহীদদের রক্ত নিয়ে ব্যবসা না করে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরে গিয়েছি। গত জুলাইয়ের আন্দোলনে আমাদের দলের যে নেতাকর্মীরা শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই আমাদের দলের। আমাদের কার্যক্রম সবার চোখের সামনে, আমরা কখনোই গণঅভ্যুত্থান এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রমাণে নিজেদের প্রচারের চেষ্টা করি না।”

এ সময় যুবদলের শীর্ষ নেতারা বলেন, তারা এখনও জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় একত্রিত রয়েছেন এবং কোনো ধরনের অপকর্ম বা অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে মাথা নত করবেন না। যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না আরো বলেন, “আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমে মনোযোগী আছি এবং দেশের জনগণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তবে এর জন্য আমাদের প্রয়োজন প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুষ্ঠু ভূমিকা।”

দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার সমালোচনা

মোনায়েম মুন্না দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বর্তমান প্রশাসন শুধু রাজনীতি নয়, সঠিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থ। কিছু বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক সংঘাত সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার কারণে একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে জনসাধারণের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।”

এ সময় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অন্যান্য নেতারা বলেন, তারা যুবদলের কর্মকাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন এবং এই ধরনের অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি এসএম জিলানি এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *