স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর আওতাধীন ৬/২ নম্বর জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমারত পরিদর্শক শাহ আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, প্রতারণা, হয়রানি ও নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা বলছেন—ঢাকায় সরকার অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করেও এখন শান্তিতে থাকা যায় না, কারণ শাহ আলমের মতো কর্মকর্তাদের ঘুষ-নির্ভর প্রতিবেদন ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
ভবন মালিকদের দুর্ভোগের চিত্র
রাজউকের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী যেসব ভবন নকশা অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে, সেইসব ভবন পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা ইমারত পরিদর্শক শাহ আলম প্রায়ই নিয়মিত রিপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানান। বেশ কয়েকজন ভবন মালিক অভিযোগ করেছেন, নকশা হুবহু মেনে কাজ করার পরও তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবেদন আটকে রাখেন। কখনো টেকনিক্যাল সমস্যা, কখনো “দৃষ্টিকটু গড়ন” দেখিয়ে ঘুষ দাবি করেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান—“আমি নিজের বাসার অনুমোদিত নকশা দিয়েই কাজ করেছি। কিন্তু পরিদর্শক শাহ আলম রিপোর্ট দিতে বারবার টালবাহানা করেন। পরে তিনি আমাকে বলেন, রিপোর্ট পেতে হলে কিছু ‘বিশেষ খরচ’ আছে। টাকা না দিলে নাকি রিপোর্ট আটকে যাবে। পরে বাধ্য হয়ে টাকা দিতেই হলো।”
“আমি একা খাই না, উপরে দিতে হয়”— শাহ আলম
এমনকি বেশ কয়েকজন মালিকের অভিযোগ, পরিদর্শক শাহ আলম ঘুষ গ্রহণের সময় নিজ মুখেই বলেন, “এই টাকা আমি একা খাই না, উপরে দিতেও হয়।” এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, এটি কোনো একক কর্মকাণ্ড নয়—বরং রাজউকের ভেতরে একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির চক্র সক্রিয় রয়েছে।
ঘুষের টাকা আদায়ে ‘রশিদ’ ব্যবহারেরও প্রমাণ
আরও বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের অর্থ আদায়ের সময় শাহ আলম কখনো কখনো মালিকদের ‘ঘুষের রশিদ’ও দিয়েছেন—যা এই দুর্নীতিকে একটি অঘোষিত নিয়মিত বাণিজ্যে রূপ দিয়েছে।
বিভাগীয় তদন্ত শুরু, ভিডিও প্রমাণ হাতে প্রশাসনের
এমন গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে “আন্তঃবিভাগীয় প্রাথমিক তদন্ত কমিটি” গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওই কমিটি তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে যে, শাহ আলম নিয়মিত চাঁদা তুলতেন এবং কিছু ঘটনায় ভিডিও প্রমাণও পাওয়া গেছে।
তদন্তে উঠে এসেছে—তিনি একাধিক ভবন মালিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং ওই অর্থের একটি অংশ রাজউকের অভ্যন্তরীণ চক্রের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
কোন কোন ভবন থেকে কত টাকা আদায় হয়েছে—তদন্তে বিশদ তথ্য
তদন্ত কমিটির একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজউকের জোন ২/২ এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে একটি অঘোষিত চাঁদাবাজি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে শুধুমাত্র শাহ আলম নন, আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবনপ্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকার চাঁদা আদায়ের নজির পাওয়া গেছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দাবি জনসাধারণের
এই ঘটনায় ভবন মালিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁদের দাবি—সরকার অনুমোদিত নকশা নিয়েও যদি কেউ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে রাজউকের স্বচ্ছতা কোথায়? তাঁরা দোষীদের দ্রুত বিচার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জনগণের ট্যাক্সে পরিচালিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রাজউক—সেখানে যদি ঘুষ-ভিত্তিক অপচর্চা অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে নগর উন্নয়ন নয়, নাগরিক দুর্ভোগই অনিবার্য হয়ে উঠবে।