আনু পলাশ:
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জারচর এলাকায় মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় প্রতিদিন শত শত চক্ষুক ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে, যা ভয়াবহ নদী ভাঙন সৃষ্টি করে ইতোমধ্যে বহু পরিবারকে গৃহহীন করেছে।
সন্ত্রাসীদের হুমকি ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
গণস্বাক্ষরিত এক অভিযোগপত্রে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সহযোগী হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী নূর ইসলাম, হান্নান ও হারুনের নেতৃত্বে প্রতিদিনই ৫০–৬০টি ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। গত ৫ জুলাই এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হামলার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাই আজিজুল ইসলাম।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলন থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিছু স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করেছেন, বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতার নাম উঠে এসেছে এই অর্থ বণ্টনের পেছনে। ভৈরবের সাবেক কমিশনার মিন্টু ও তারেক নামেও অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া কয়েকজন বিতর্কিত মিডিয়াকর্মীর নামও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, “আমরা একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। রায়পুরার ওই এলাকায় কোনো বৈধ বালু উত্তোলনের ইজারা নেই। অভিযান চলমান থাকবে।”
রায়পুরা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান রুবেল জানান, “বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।”
বিএনপির পাল্টা বক্তব্য
বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, “আমরা কোনো টাকার ভাগ নিই না। যারা নিচ্ছে, তাদের তালিকা তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকন বলেন, “যারা বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের একটি তালিকা তৈরি করে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাবো।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র ও ফেসবুক স্ট্যাটাস
একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত অভিযোগ ও একটি সূত্র জানিয়েছে, মামুন মেম্বারের মাধ্যমে নরসিংদী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর এলাহী, সহ-সভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী, এম এন জামান, ফাইজুর রহমান, রায়পুরা উপজেলা বিএনপির কুদ্দুস, যুবদল নেতা মিঠু ও হাবিবুর রহমান নিয়মিত টাকা পাচ্ছেন এবং বালু ব্যবসায় শেয়ারও রয়েছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মামুন মেম্বার বলেন, “আমার নামে একাধিক মামলা আছে। যারা বিএনপি করে তারা অবশ্যই বালু তুলবে। বড় বড় নেতারা খাচ্ছে। ফেসবুকে বা পত্রিকায় লিখলে আমাদের কিছুই করতে পারবেন না।”
স্থানীয়দের আহ্বান
এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন—স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান ও কৃষিজমি রক্ষায় অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং সশস্ত্র চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।