স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ পাঁচজন আটকের ঘটনা ঘিরে সারাদেশে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন দেশের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োজিত ছাত্র প্রতিনিধিদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও ‘ছত্রচ্ছায়ায় থাকা’ সিন্ডিকেট।
ইতোমধ্যে এ ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও গণঅধিকার পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
তিনি অভিযোগ করেছেন, “অপরিসীম ক্ষমতাই তরুণদের পথভ্রষ্ট করেছে।” রবিবার (২৭ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
‘ছাত্র প্রতিনিধি’ ব্যবস্থার আড়ালে বদলি-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি
রাশেদ খান দাবি করেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ছাত্র প্রতিনিধি নামধারীরা তদারকির নামে বদলি, নিয়োগ, প্রমোশনসহ নানা রকম প্রশাসনিক বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি লেখেন, “একজন ডিসির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি জানালেন, জেলা পর্যায়ের সব দপ্তরে ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কাজ করার জন্য আমাদের ওপর উপদেষ্টাদের নির্দেশনা আছে। এজন্য আমরা প্রতিটি দপ্তরে ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ ঠিক করে দিয়েছি।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই ছাত্র প্রতিনিধিরা এখন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এমন ভাষায় কথা বলেন:
“আমাকে এখানে এনেছে, আমাকে বাদ দিবে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিবে— এগুলো করে কিছু করতে পারবেন না!”
‘একেকজন সমন্বয়ক ছিল প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন’
রাশেদ খান দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা তাকে জানিয়েছেন, এই আন্দোলনের একেকজন সমন্বয়ক কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।
“গণঅভ্যুত্থানের পর এক একটা সমন্বয়ক মানে ছিল প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা। আমি নিজেও যখন সহ-সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম, তখন সেই অনুভূতি হতো,” — বলেন তিনি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে তরুণরা ছিল মাথার মুকুট, আজ তাদের ঘিরে এত প্রশ্ন ও অভিযোগ কেন? দায় কার?”
অন্তর্বর্তী সরকার ও ড. ইউনূসকে দায়ী করলেন রাশেদ
রাশেদ খান দাবি করেন, এই নৈরাজ্যপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য দায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তার মতে, গণঅভ্যুত্থানের পর এই সরকার ছাত্র প্রতিনিধিদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছে, যার অপব্যবহার এখন দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে।
তিনি বলেন,
“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ছাত্র প্রতিনিধি ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। তরুণদের এই বিপথগামিতার জন্য দায়ী এনজিও ব্যক্তিত্ব, বৃদ্ধ আমলা ও সুশীল সমাজের কিছু মুখোশধারী।”
তিনি আরও প্রস্তাব দেন,
“আসছে ৮ আগস্ট ‘বিপ্লব বেহাত দিবস’ পালন করে তাদেরকে সম্মানিত করা হোক!”
প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
উল্লেখ্য, চলমান সহিংসতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নেতৃত্বের নামে চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো নিয়ে দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে ছাত্র প্রতিনিধি ব্যবস্থার সংস্কার বা বাতিলের দাবি উঠছে।
অন্যদিকে, সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমাও এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন, যদিও তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য দেননি এ ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষে বা বিপক্ষে।