কামরুল ইসলাম:
চট্টগ্রাম নগরীর ৩০টি স্পটে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে—এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারা জানান, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ গাড়ির মালিক, চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা আদায় করায় সৃষ্ট হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
অভিযোগ রয়েছে, দিনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা চাঁদাবাজি করছেন। গাড়িচালক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একটি দল এবং বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অন্য একটি দল এই চাঁদাবাজির ‘দায়িত্ব’ পালন করে। আবার কিছু জায়গায় রাত ১১টার পরও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, শাহ আমানত সেতু, কালুরঘাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, টাইগার পাস, অলংকার মোড়, সিটি গেট, সল্টগোলা ক্রসিং ও সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় রাত ১১টার দিকেও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তারা অবস্থান নেন আলোতে নয়, আঁধারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ ও উত্তর পাশে, কালুরঘাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন, ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, জিইসি, টাইগার পাস, কোতোয়ালি, সিটি গেট, একে খান, অলংকার, নয়াবাজার, বড়পোল, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং, নিমতলা বিশ্বরোড, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিংসহ প্রায় ৩০টি স্পটে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি প্রকাশ্যেই চলছে। প্রতিটি মোড়ে ১০ মিনিট দাঁড়ালেই চোখে পড়বে অভিনব কায়দায় টাকা আদায়ের দৃশ্য। বৈধ বা অবৈধ—যাই হোক, সিগন্যাল দিলেই দিতে হয় টাকা। না দিলে হরেক রকম মামলা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকার মনির নামের এক ট্রাকচালক বলেন, “ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল দিলেই বুঝতে হয় টাকা দিতে হবে। না দিলে যেকোনো অজুহাতে মামলা দেবে। কিছুদিন আগে সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় মোটরসাইকেলে ইপিজেড থানায় যাওয়ার পথে এক ট্রাফিক সার্জেন্ট আমাকে থামায়। তখন আমার কাছে কাগজ ছিল না, বলি বাসা থেকে ১৫ মিনিটে নিয়ে আসছি। ফিরে এসে দেখি মামলা দিয়ে ফেলেছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরটিলা এলাকার এক ব্যক্তি জানান, “ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে পতেঙ্গা থেকে নিমতলা বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। সল্টগোলা ক্রসিংয়ে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সোর্স সিন্ডিকেটও কাজ করছে। সোর্সরাও টাকা তোলে।”
একটি সূত্র জানায়, ট্রাফিক বন্দর জোন এলাকায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোনো গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়ালে সেটিকে রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় টাইগার পাস ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে। সেখানে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলরা প্রতিটি গাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই টাকা থেকে ট্রাফিক বিভাগের ডিসি পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ভাগ পান।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চাঁদাবাজির বিষয়ে আমার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কতটি স্পটে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন আছে জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ, প্রশাসন ও ট্রাফিক) বলেন, “আপনারা ছবি বা অভিযোগ পেলে নিউজ করেন। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাফিক পুলিশের টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”