ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স ইন্ডাস্ট্রি রক্ষায় প্রশাসক অপসারণ ও নির্বাচিত BAFFA পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহালের দাবি

সাগর চৌধুরী ভোলা: 

১৪ই আগস্ট ২০২৫, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে BAFFA সাধারণ সদস্যরা তাদের দাবি উত্থাপন করে বলেন আমরা, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (BAFFA)-এর সাধারণ সদস্যবৃন্দ, গভীর উদ্বেগের কারণে অত্র সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছি। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) ১,১৮৮ জন সদস্যের একটি পেশাদার ও প্রভাবশালী ট্রেড বডি। দেশের প্রায় শতভাগ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাফা সদস্যদের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। এই সংগঠনের কার্যপরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত—কাস্টমস, বন্দর, বাংলাদেশ ব্যাংক, এয়ারলাইন, শিপিং লাইন, সদস্যদের লাইসেন্স নবায়ন, এনলিস্টমেন্ট, সদস্যপদ প্রদানসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এর অন্তর্ভুক্ত।

গত জুন মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় BAFFA-র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ (BOD) বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগ করেন, যা আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ এবং দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে মারাত্মক ক্ষতি ও হুমকির সৃষ্টি করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাজেটে গ্রস ইনভয়েসের উপর ১.৫০% অগ্রিম আয়কর (AIT) এবং ১% টার্নওভার ট্যাক্স আরোপ, চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধি, বিকডার হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধি, আইজি/ইজিএম জটিলতাসহ বহু চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। অথচ এই সংকটময় সময়ে একজন প্রশাসক নিয়োগ, যিনি পেশাগতভাবে এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ নন, তা বাফার কার্যক্রম ও স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর।

বর্তমান বাফা বোর্ড গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছিল এবং মাত্র তিন মাস পর নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে প্রশাসক নিয়োগ ছিল সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। তাঁকে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও নিয়োগের ৭০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো তফসিল ঘোষিত হয়নি। বরং দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশে ছুটিতে ছিলেন।

অধিকন্তু, প্রশাসক এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা তাঁর এখতিয়ার বহির্ভূত।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—এই অযাচিত প্রশাসক নিয়োগ গণতন্ত্রবিরোধী এবং বাফা সদস্যদের ভোটাধিকার হরণের শামিল।

স্বার্থের দ্বন্দ্ব (Conflict of Interest):
BAFFA-তে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন, কোনো ধরনের বেতন গ্রহণ করেন না। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও ব্যবসার উন্নয়ন, বাণিজ্য সহজীকরণ ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করা। অপরদিকে, DTO কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক সংগঠনের তহবিল থেকে বেতন গ্রহণ করেন এবং মূলত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এর ফলে তাদের উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকার সংগঠনের মূল নীতি ও লক্ষ্য থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন, যা সরাসরি স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করে।

একটি বাণিজ্য সংগঠনের অন্যতম মূল কাজ হলো সংগঠনের ও তার সদস্যদের স্বার্থে সরকারের সাথে নীতিগত ইস্যুতে অ্যাডভোকেসি ও ডায়ালগের মাধ্যমে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যা একজন সরকারি আমলা কোনোদিনও তার চাকরির শর্তের বরখেলাপ করে করবেন না।

সদস্যদের লাইসেন্স নবায়ন, সদস্যসেবা প্রদান এবং অন্যান্য কল্যাণমূলক কার্যক্রম যা প্রতিদিনের রেগুলার কার্যক্রম, সেগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

প্রশাসক থাকার কারণে সংগঠন ও সদস্যদের মধ্যে নেতৃত্বের আস্থা ও যোগাযোগ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সদস্যরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন।

২০২২ সালের বাণিজ্য সংগঠন আইনের ধারা ১৭ অনুসারে, পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ও প্রশাসক নিয়োগের আগে লিখিত নোটিশ প্রদান এবং পরিচালনা পর্ষদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই আইনি বাধ্যবাধকতা না মেনে প্রশাসক নিয়োগ করেন যা অত্যন্ত গর্হিত ও দুঃখজনক।

বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২:
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে, যা পরিবর্তন করা আবশ্যক। আইনের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিশয় হস্তক্ষেপ অত্যন্ত দুঃখজনক।

আইনটি মূলত দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও, এর প্রয়োগে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদকে একতরফাভাবে অপসারণের সুযোগ বিদ্যমান রাখা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সম্মতি ছাড়া এমন পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।

আমাদের দাবিসমূহ:
উপরের প্রেক্ষাপটে আমরা নিম্নলিখিত দাবিসমূহ পেশ করছি—

১. অবিলম্বে পদক্ষেপ: বর্তমান প্রশাসককে অবিলম্বে অপসারণ করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহাল করা, যাতে সংগঠন পুনরায় কার্যকরভাবে সংগঠন, ইন্ডাস্ট্রি ও সদস্যদের স্বার্থে কাজ করতে পারে।

উল্লেখ্য যে, আমাদের এই দাবি (আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে) পূরণ করা না হলে আমরা সাধারণ সদস্যগণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের লিখিত প্রতিবাদ প্রদান পূর্বক, কর্মবিরতি পালনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মর্যাদা রক্ষায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

বিনীত,
সাধারণ সদস্যবৃন্দ
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (BAFFA)

অতিরিক্ত নোটসমূহ:
বক্তব্যটি পাঠ করেন নাফা ফ্রেইটের মি. নূর উদ্দিন, এবং আলফা লজিস্টিকসের মি. নূর আলম। সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)-এর এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

বিলুপ্ত বাফা পরিচালনা পর্ষদকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সাবেক বাফা সভাপতি এবং বিলুপ্ত পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং মি. নূর উদ্দিনের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের করা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেন।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ, নাসির আহমেদ, খোরশেদ আলম, সোহেল আমিন, আব্দুল মান্নান, আনোয়ার হোসেন, ওবায়দুল ইসলাম, মিজানুর রহমানসহ অন্যান্যরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *