স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোববার (১৭ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে ল্যাবএইড গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. এ এম শামীম জানান, আহমদ রফিক বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তার কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে। তবে চিকিৎসক দলের পর্যবেক্ষণে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
একা ও অসুস্থ জীবনের দীর্ঘ লড়াই
৯৫ বছর বয়সী এই ভাষাসৈনিক রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে একটি ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন ধরে একাই বসবাস করছিলেন। ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালাম জানান, ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর থেকেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। এরপর দৃষ্টিশক্তি প্রায় সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলার ফলে তিনি লেখালেখি বন্ধ করতে বাধ্য হন। এতে তিনি মানসিকভাবেও ভীষণ ভেঙে পড়েন।
আহমদ রফিকের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে ২০১৯ সাল থেকে। সে বছর চোখে অস্ত্রোপচার করলেও বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। ২০২৩ সাল থেকে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন।
সাহিত্য, গবেষণা ও সংগ্রামের মানুষ
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া আহমদ রফিক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে তিনি বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার পক্ষে অক্লান্তভাবে কাজ করেছেন।
তার স্ত্রী ২০০৬ সালে ইন্তেকাল করেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। জীবনের পরিশ্রম ও অর্জনের বড় সম্পদ হলো তার অজস্র লেখা, সংগ্রহ করা বই এবং গবেষণাকর্ম। কবিতা, প্রবন্ধ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, সাহিত্য-গবেষণা, রবীন্দ্রচর্চা ও সম্পাদনা মিলিয়ে তার লিখিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক।
জাতীয়ভাবে স্বীকৃত এক মনীষী
আহমদ রফিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবি পুরস্কারসহ বহু জাতীয় সম্মাননা পেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তার দীর্ঘ গবেষণা তাকে ‘রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ’ হিসেবে বিশেষ খ্যাতি এনে দিয়েছে।
বর্তমানে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদ, লেখক ও সাধারণ মানুষ সবাই তার সুস্থতা কামনা করছেন।