মোঃ মশিউর রহমান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এলেঙ্গা পৌরসভার হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার হাত ধরে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে হিসাব রক্ষক পদে চাকরি পান গোলাম মোস্তফা। তিনি এলেঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ভাবলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের ছেলে।
পৌরসভার কয়েকজন কর্মচারী জানান, হিসাব রক্ষক পদে মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন গোলাম মোস্তফা। এর পর থেকেই তার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় মোস্তফা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই চাকরির ক্ষমতা দিয়েই ক্রয় করেন এলেঙ্গা শহরের মশাজান এলাকায় ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের জমি। এখানেই থেমে থাকেননি, ক্রয় করেছেন অর্ধকোটি টাকা মূল্যমানের দুইটি ভেকু, যা অবৈধ বালুঘাটে ভাড়া দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার কর্মচারীদের সাথেও অসদ আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, বিগত দিনে এলেঙ্গা পৌরসভায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড সংশোধনের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এই হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা জানান, একজন কর্মচারীর অপকর্মের দায় পৌরসভা নেবে না।
এ বিষয়ে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের আবু হানিফ ও আজাহার আলী সচিব বরাবর মৌখিকভাবে অভিযোগ দেন। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের পক্ষে এক ব্যক্তি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে স্থানীয় সরকারের প্রধান বরাবর তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি প্রেরণ করেন পৌর প্রশাসক। যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এলেঙ্গা পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোস্তফাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছিলেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, স্থানীয় ও কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এখনও বীরদর্পে হিসাব রক্ষক পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এলেঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ মিনু বলেন, এলেঙ্গা পৌরসভার হিসাব রক্ষক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও নাম সংশোধনের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যা ইতিপূর্বে তিনি বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, আমি পৌরসভার নিয়মিত একজন ঠিকাদার। সম্প্রতি সময়ে আমার একটি কাজ সমাপ্ত করি। পরবর্তীতে হিসাব রক্ষক মোস্তফার নিকট বিলের চেকের জন্য গেলে টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আমার বিল আটকিয়ে রেখেছেন। তিনি শুধু আমার কাছ থেকে নয়, প্রত্যেকটি ঠিকাদারের কাছ থেকেও বিল প্রদানের পূর্বে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার বিরুদ্ধে অযথা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। আমি কোনো ধরণের অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। এলেঙ্গা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক বলেন, টিসিবির বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেটি পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের দায়িত্বরত কর্মরত কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে তা আমি জানি না। এছাড়াও ঠিকাদারদের যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা আমি অবগত নই। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।