মোঃ বাদল:
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ডেমরা রোডস্থ মৃধাবাড়ী এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের যাত্রাবাড়ী থানা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ শাহ (৩৭) কে গত ১৮ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটিরত গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ টিম গ্রেফতার করেছে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, মারুফ আহমেদ শাহ জুলাই মাসে সরকারের বিরোধী গণ-আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত এক ছাত্রকে পায়ে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। আহত ছাত্র এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ২৮৫/২০২৫, তারিখ ৮/৪/২০২৫। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একাধিক মামলা এবং অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেফতারের পেছনে মূল মামলা (যাত্রাবাড়ী থানার মামলা নং ৬০, তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৫) অনুসরণ করা হয়েছে, যা সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৮/৯/১০/১২ ধারায় রুজু করা হয়েছিল। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুযায়ী, ২০ এপ্রিল সকাল প্রায় ৬:৪০ মিনিটে মারুফ আহমেদ শাহের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যরা যাত্রাবাড়ীর কাজলারপাড় এলাকায় গোপন বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকে তারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে প্রায় ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী ছত্রভঙ্গ হয়ে আশেপাশের গলির রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়। তাদের তথ্য ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ১৮ আগস্ট আনুমানিক ৫:৩০ মিনিটে মারুফ আহমেদ শাহকে গ্রেফতার করা হয়।
এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, গ্রেফতারকৃত এবং পলাতক আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা জানান, আগের মামলার ভিত্তিতেই মারুফ আহমেদ শাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রচলিত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, তার দুই ভাই—শরিফ আহমেদ ও আরিফ আহমেদ—সায়দাবাদ ট্রেড সেন্টার ভবনের একাংশের মালিকের ছেলে সাংবাদিক মোঃ বশির আহমেদ (সানি)কে দোষারোপ ও হুমকির বিষয়েও জড়িত ছিলেন। সাংবাদিক মোঃ বশির আহমেদ জানান, উত্তর সায়দাবাদ এলাকার ২২ হোল্ডিংয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য তার পিতাসহ জমির মালিকদের সঙ্গে ২০১৮ সালে ৫ বছরের চুক্তি হয়, যা ২০২৩ সালে শেষ হয়।
মারুফ আহমেদ শাহ বিগত সময়ে ভূমি মালিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, খুন, গুম এবং মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে অনেকের প্রাপ্য অংশ বাধ্যতামূলকভাবে নিয়েছে। এছাড়া তিনি তার কোম্পানি ‘মারুফ প্রপার্টিজ লি.’ এর মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠনকে অর্থ যোগান দিয়ে বিভিন্ন জমি ও ফ্ল্যাট জবরদখল করেছেন। আদালত ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট/জমি ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তবে তা অমান্য করে তিনি আবারও জমি ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মারুফ আহমেদ শাহ ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন যাবৎ নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন নিরীহ মানুষের ভূমি জবরদখল করে ব্যবসা করে আসছিলেন।