আলমাস হোসাইন:
ঢাকার আশুলিয়ায় পাঁচ বছরের শিশু জোনায়েদ অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় তদন্তে অবহেলা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানাকে ক্লোজড করা হয়েছে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) রাত দু’টার দিকে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হান্নান। এর আগে বিকেলেই তাকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
টাকা নিয়েও তদন্ত করেননি এসআই
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগে জানা যায়, শিশু জোনায়েদ নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবার আশুলিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে। তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মাসুদ রানা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পরিবারের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন এবং কিছু টাকা নেনও। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও তিনি কোনো তদন্ত কার্যক্রম চালাননি।
বরং, পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, “এই থানায় আরও ২০/২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের কেউ আমাকে এভাবে বিরক্ত করে না, শুধু আপনারাই করছেন।”
হতাশ পরিবার র্যাবের দ্বারস্থ
পুলিশের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে পরিবার যোগাযোগ করে র্যাবের সাথে। পরে নিখোঁজের ১৩ দিন পর র্যাব-৪ শিশু অপহরণকারী মোরসালীনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালীন শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং তার দেখানো জায়গা থেকে জোনায়েদের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ প্রকাশের পর দ্রুত ব্যবস্থা
এসআই মাসুদ রানা দায়িত্বে অবহেলা, ঘুষ দাবি এবং টাকা নেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় ৩০ আগস্ট। বিষয়টি প্রকাশের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
থানার ওসির বক্তব্য
আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, “এসআই মাসুদ রানা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে ছিলেন। সেই ছুটি অবস্থায় আজ তাকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।”
প্রসঙ্গত
প্রায় দুই মাস আগে এসআই মাসুদ রানা আশুলিয়া থানায় যোগ দিয়েছিলেন। যোগদানের অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় জনমনে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, পুলিশ যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তবে হয়তো জোনায়েদকে জীবিত উদ্ধার করা যেত।
জনমতের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছেন—
“জনগণ নিরাপত্তার জন্য থানায় আসে, আর থানার লোকজনই টাকা খেয়ে বসে থাকে—এটা কি মেনে নেওয়া যায়?”
“এত ছোট্ট একটা শিশু, অথচ পুলিশ দায়িত্ব পালন না করে অবহেলা করেছে। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”
“পুলিশি সেবা না পেয়ে মানুষ যদি র্যাব বা অন্য বাহিনীর কাছে দৌড়ায়, তাহলে থানার দরকারটা কী?”
এমন প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়, পুলিশের আচরণে সাধারণ মানুষের আস্থা বারবার ভেঙে পড়ছে।
রিপোর্টারের নোট
এই ঘটনার তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় মানুষ যেমন ক্ষুব্ধ, তেমনি ভুক্তভোগী পরিবারও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে পুলিশের অবহেলা—দুই আঘাতেই পরিবারটি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এমন ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শুধু “ক্লোজড” করাই কি যথেষ্ট, নাকি কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করা জরুরি?