কামরুল ইসলাম:
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সম্প্রতি একাধিক মানবিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাফল্যমণ্ডিত অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসব অভিযানের পেছনে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শহীদুল্লা কায়সার পিপিএম-এর দিকনির্দেশনা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসরুল হকের নেতৃত্ব। শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে অস্ত্র উদ্ধার, অপহরণকৃত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন—সবক্ষেত্রেই নাইক্ষ্যংছড়ি থানার টিমের দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে স্থানীয়দের।
মায়ের কোল ফিরল ১৪ মাসের শিশু: মানবিকতার দৃষ্টান্ত
গত ২৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের রোকসানা আক্তার (১৮) পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী মো. শামিম মিয়া (২০)-এর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এসময় শামিম তাদের ১৪ মাস বয়সী শিশুটিকে আটকে রাখে। পাঁচ দিন সন্তানকে না পেয়ে দুধ জমে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন মা। সালিশের মাধ্যমে সমাধান চাইলেও প্রতিপক্ষ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে।
অবশেষে রোকসানা আক্তার থানায় অভিযোগ করেন। ওসি মাসরুল হক দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তাঁর নির্দেশে এসআই (নিঃ) মো. আসলাম আহমদের নেতৃত্বে এএসআই (নিঃ) সুমন রুদ্র, এএসআই (নিঃ) রনজিৎ চৌধুরী ও নারী কনস্টেবল জাহানারা আক্তারসহ একটি চৌকস টিম অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোল ফিরিয়ে দেয়।
শিশু ও মায়ের আনন্দাশ্রু দেখে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হন। এলাকাবাসী পুলিশের এই মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়।
পাহাড় থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র
মানবিক কাজের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও ছিল পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা। গত ২৪ জুন রাত ১টা ১৫ মিনিটে এসপি শহীদুল্লা কায়সারের দিকনির্দেশনায় ওসি মাসরুল হকের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয় লেমুছড়ি থেকে কুরুখংগামী সড়কের দক্ষিণ পাশের পাহাড়ে। সেখানে দুটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়ানো অবস্থায় তিনটি দেশীয় তৈরি বন্দুক (গাধা বন্দুক) জব্দ করা হয়।
পাহাড়ি অঞ্চলে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা সন্ত্রাসীদের অন্যতম কৌশল হলেও পুলিশের এ অভিযান অস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাস দমনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
অপহরণের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন
গত ১৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে সৈয়দ নূর (৩১) নামে এক যুবক নিখোঁজ হন। তাঁর স্ত্রী জোবাইদা বেগম থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১১, ধারা-৩৬৪/৩৮৫/৩৪ পেনাল কোড)। মামলার তদন্তভার ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পরিদর্শক জাফর ইকবালকে দেওয়া হয়।
ওসি মাসরুল হক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালান। ২১ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় মামলার আসামি মোহাম্মদ ইসমাইল (২৭)। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িয়ে পড়েন আরেক আসামি রহমত উল্লাহ (৩২)। দুই আসামি স্বীকার করে যে, তারা ১৮ জুলাই বিকেলে সৈয়দ নূরকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়, হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং লাশ ঢলুবনিয়া পাহাড়ে ফেলে দেয়।
পরে পুলিশ গভীর অরণ্যে গিয়ে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়। একই সঙ্গে ভিকটিমের ব্যবহৃত ডিসকভার মোটরসাইকেলটিও টেকনাফের হোয়াইকং এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ইসমাইল, রহমত উল্লাহ ও আলী হোসেন ওরফে মুনিয়া নামের তিনজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হয়। মুনিয়াকে পরবর্তীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জনমতের প্রতিক্রিয়া
এসপি শহীদুল্লা কায়সারের দিকনির্দেশনা এবং ওসি মাসরুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের এ ধারাবাহিক সাফল্য স্থানীয় জনসাধারণের আস্থা অর্জন করেছে। তারা বলছেন, “নাইক্ষ্যংছড়ি থানার কর্মকাণ্ডে আমরা বুঝতে পারছি— পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগকারী বাহিনী নয়, বরং আমাদের পরিবারের নিরাপত্তার অংশ।”
পুলিশের বক্তব্য
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মাসরুল হক বলেন—
“মা ও শিশুর সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র বন্ধন। এমন মানবিক পরিস্থিতিতে আমরা সবসময় পাশে দাঁড়াই। আবার অপরাধ দমনে আমরা কোনো ছাড় দেই না। এসপি শহীদুল্লা কায়সার স্যারের সাহসী দিকনির্দেশনাই আমাদের প্রতিটি কাজে প্রেরণা জোগায়।”
সারসংক্ষেপ
একদিকে পরিবারে সন্তানকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে মানবিকতার নজির, অন্যদিকে অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন—সব ক্ষেত্রেই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। এর পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এসপি শহীদুল্লা কায়সার ও ওসি মাসরুল হক। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা আরও সুদৃঢ় হবে।