মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:
রোগীর মাকে মারধর, শিশুর মৃত্যু, গোপন ক্যামেরা, অনুমোদনহীন চিকিৎসা
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় নির্মল কুমার দাস নামে এক কথিত পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা, প্রতারণা, মারধর, গালাগাল এবং শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের দাবি অনুযায়ী, তিনি বিএ পাস একজন ব্যক্তি হয়েও নিজেকে “শিশু বিশেষজ্ঞ” দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি রাজু আক্তার অভিযোগ করেন, ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে তিনি পুনরায় চেম্বারে গেলে এক বছরের শিশুটি টেবিলে প্রস্রাব করে দিলে সেই প্রস্রাব টিস্যু দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। পরে, ডাক্তার নির্মল কুমার দাস তার মাথায় ঘুষি মারেন, চুল ধরে টেনে বের করেন ও গালাগাল করেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর ঘিওর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বর্তমানে তার মেয়ে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অতীতে আরও একটি শিশুমৃত্যু
স্থানীয় বাইলজুরি গ্রামের সপ্না আক্তার অভিযোগ করেন, আনুমানিক তিন বছর আগে তার ১৩ মাস বয়সী কন্যা ‘মায়া’ নির্মল কুমার দাসের ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। বিষয়টি থানায় অভিযোগ আকারে উপস্থাপন করা হলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেটি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
⚠️ ভুয়া চিকিৎসা কার্যক্রমের ভয়াবহ দিকগুলো:
-
অনুমোদন ছাড়া উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ব্যবহার
-
সিসি ক্যামেরা দিয়ে রোগীদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত ধারণের অভিযোগ
-
চেম্বারে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে সেলসম্যান দিয়ে রোগী দেখা
-
বাচ্চা ও বৃদ্ধ রোগীর ওপর ভুল ট্রিটমেন্ট
-
৪০ থেকে ৫০ নাম্বার কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার এবং বেশি দামে বিক্রি
-
কমিশনের বিনিময়ে নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহারে রোগীর জীবন ঝুঁকিতে ফেলা
-
৪ থেকে ৫ জন কোম্পানির সেলসম্যানকে জিম্মি করে কোম্পানি থেকে কমিশন নেওয়া
-
অনুমোদন ছাড়াই জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন প্রয়োগ
-
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া
অভিযুক্তের বক্তব্য
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নির্মল কুমার দাস প্রথমে বলেন, “এই তো একটু পরে ফোন করে বক্তব্য দিচ্ছি,” বলে ফোন কেটে দেন।
চেম্বারে থাকা সেলসম্যান মনির বলেন, “আমি ডাক্তার না। প্রেসক্রিপশন ছাড়া রোগী দেখতাম ডা. নির্মল কুমার দাসের নির্দেশে। আমি এর জন্য দুঃখিত, আর করব না।”
স্থানীয়দের অভিযোগ
স্থানীয়রা জানান, নির্মল কুমার দাস বছরে কোটি টাকার বসতবাড়ি নির্মাণসহ বাড়িতে চেম্বার দিয়ে রোগীর চিকিৎসা ও মানহীন ওষুধ বিক্রি করেন, যার কোনো ভ্যাট বা আয়কর দেওয়া হয় না। ব্যাংকে আনুমানিক ২-২.৫ কোটি টাকার সঞ্চয় রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। তার সন্তানরা ব্যয়বহুল প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।
ঘিওর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কোহিনুর মিয়া বলেন,
“তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ খুরশীদ আলম জানান,
“পল্লী চিকিৎসকদের অ্যান্টিবায়োটিক লেখার কোনো অধিকার নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ভুক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয়দের দাবি
“এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যেন দ্রুত তদন্ত হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। তার চিকিৎসায় আরও কারও সন্তান যেন না হারায়।”