শেখ হাসিনার কপালে নামাজের দাগের কোনো কথা পীর সাহেব চরমোনাই বলেননি: শহিদুল ইসলাম কবির।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর পীর সাহেব চরমোনাই-এর মূল বক্তব্য কাঁটিং করে অশুভ উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির অপপ্রয়াস দেখা যাচ্ছে।

যারা পীর সাহেব চরমোনাই-এর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দৈনিক কালবেলা পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া থেকে হলুদ সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে পীর সাহেব চরমোনাই-কে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা এই ডিজিটাল যুগে হয়েছে।

মূল বক্তব্যে যাওয়ার পূর্বে এতটুকু স্পষ্ট করে বলতে চাই — ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সাবেক আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ), বর্তমান আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী অথবা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কোন পর্যায়ের কোন নেতা ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কখনো এক সেকেন্ডের জন্যও সাক্ষাৎ করেছেন বা কথোপকথন করেছেননি। আর শেখ হাসিনার কপালে নামাজের চিহ্ন আছে এমন বক্তব্য পীর সাহেব চরমোনাই বলার প্রশ্নই আসে না। যে বা যারা এই কাটছাঁট করা ভিডিও তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে — এটাই দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ-এর উদ্যোগে ঢাকার কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে “দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে” জাতীয় সেমিনারে পীর সাহেব চরমোনাই প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি বলেন, লেখাপড়ার মানের অবনতির কারণে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে; শিশুদের মানসিক ও আদর্শিক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সরকার সেদিকে লক্ষ্য না করে গানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। মানুষ বাচ্চাদেরকে ছোটকাল থেকেই ইসলাম শিখাতে চায়। ইসলামের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। সরকারের উচিত স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। তারা সেটা করছে না। আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, দক্ষ ও নৈতিকতা-সম্পন্ন প্রজন্ম গড়তে অবিলম্বে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে; না হলে দেশের মানুষ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। সেমিনারে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড — তবে তা সুশিক্ষা হতে হবে। সাম্প্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে একটা দলের নেতার যে আচরণ দেখেছি, তাতেই বোঝা যায় দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও সুশিক্ষা অর্জন হয়নি।

প্রসঙ্গক্রমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর বলেন, সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ) বলেছেন — শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড। কিন্তু সব শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড হতে পারে না। সুশিক্ষাই হলো জাতির মেরুদণ্ড। তার বাস্তবতা আমরা দেখেছি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকসু নির্বাচনের সময়ে ছাত্র দলের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সামনে যে আচরণ করেছে তা বাংলাদেশের মানুষ ভালো আচরণ হিসেবে কখনো গ্রহণ করবে? এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, সে শিক্ষা গ্রহণ করলেও স্থানকাল-পাত্র অনুযায়ী আচরণ-ব্যবহার তাকে শেখানো হয়নি।

তিনি বলেন, ছোটবেলায় যে শিক্ষা দেয়া হয় তা কখনো ধ্বংস হয় না। ছোটবেলার শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর বলেন, ২০২৪ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যখন পাতানো নির্বাচন তৈরী করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে নির্বাচনে নেবার ব্যাপারে দূত পাঠানো হয়েছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে যখন আমাকে নিয়ে বসবে তখন আমি শর্ত লাগিয়েছিলাম যে তাদের নির্ধারিত জায়গায় আমরা বসবো না। আমরা যেখানে বলবো সেখানে তাদের বসতে হবে। আমাদের প্রস্তাব মেনে তারা বসেছিল। বসার পরে সরকারি কর্মকর্তা ঐ দূতের কপালে নামাজের দাগ দেখা যায়। তখন আমি প্রশ্ন করলাম — আপনার কপালে তো নামাজের দাগ দেখছি। তখন তিনি বলছিলেন, “হুজুর, আমি ৭ বছর বয়স থেকে নামাজ পড়ি। কিভাবে? বললাম, আমি যদি নামাজ না পড়তাম, তাহলে আমার মা আমার জন্য ঘরে ভাত রান্না করতেন না। আমার মা আমাকে নামাজী বানানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। সেই থেকে, হুজুর, আমি নামাজ পড়ি; নামাজ ছাড়ি না।” তখন আমি বললাম — তবে তো ভাই—ভাই হিসেবে কথা বলার আমার সাহস বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সামনের আচরণকারীদের সামনে কথা বলার পরিবেশ থাকে না। তখন আমি বলেছি — আপনারা এই পাতানো নির্বাচনে আমাদেরকে নিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আসছেন। আমাদেরকে সেখানে ঢুকাবেন, এমপি বানাবেন; অনেক কিছু আমাদেরকে অফার দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন দায়িত্ব, হুজুর, আমি নেব। আপনাদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করার দায়িত্ব আমি নেব। তখন আমি হেসে বলছিলাম, একটি কথা আপনাকে বলি শোনেন — বর্তমান সরকার কোন প্রেসক্রিপশন এ চলে? ব্যাখ্যায় না গিয়ে বললাম আমাদের দেশের প্রেসক্রিপশন নয়। এই প্রেসক্রিপশন অন্য যায়গায় হয়; এখানে বাস্তবায়ন হয়। আপনি পরিষ্কার জেনে রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৭ সালে। এখন পর্যন্ত কোন ফ্যাসিস্ট, কোন চাঁদাবাজ, কোন খুনি, কোন মিথ্যুক, জালেম, দেশের টাকা পাচারকারীর ক্ষমতায় যাবার জন্য সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হওয়া হয়নি। সিঁড়ি হিসেবে আমাদের ব্যবহার করলে আর ক্ষমতার মসনদে যাবে তা হবে না। আমরা কোন দুর্নীতিবাজ, জালেমদের সহযোগী কখনো ছিলাম না এবং এখনো আমাদেরকে পাবেন না। এক পর্যায়ে বলছিলাম — যদি আমাদেরকে ক্ষমতা ব্যবহার করে চাপ প্রয়োগ করে সেখানে ঢুকিয়ে ফেলেন, তবে দেশের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, জনগণের পক্ষে কে কোন দল কথা বলবে, আপনি দেখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, “হুজুর, আপনাদের অবস্থান আমি বুঝতে পারছি। প্রধানমন্ত্রীকে এভাবেই বলবো।” এরপর থেকে খুব একটা ডিসটার্ব করেনি। আমরা নিরিবিলি থাকতে পারছি।

লেখক: সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *