মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর অঞ্চল-৫ এর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুর কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের তদন্তে জানা গেছে, এসএ গ্রুপের কর্ণধার ও এসএ পরিবহনের মালিক সালাহ উদ্দিন আহমেদ ১২ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন সাজিয়ে মোট ২৩৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার আয়ে কর ফাঁকি দিতে মিতুর সঙ্গে ১ কোটি টাকার ঘুষ চুক্তি করেছিলেন।
ঘুষের অর্থ লেনদেন ও নথি হস্তান্তর
সূত্র জানায়, সালাহ উদ্দিন আহমেদের আয়কর আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুর সঙ্গে ঘুষ চুক্তির পর ৩৮ লাখ টাকা নগদ প্রদান করেন। বিনিময়ে মিতু ১২ করবর্ষের রিটার্ন ও অন্যান্য স্পর্শকাতর নথি ওবায়দুলের হাতে তুলে দেন।
এই ঘটনায় রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম কর অঞ্চল-৫, ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে ঘুষের বিনিময়ে নথি হস্তান্তরের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায় বলে দুদক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, কর অঞ্চল-৫ এর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঘুষের মাধ্যমে অবৈধভাবে আয়কর নথি পরিবর্তন ও সম্পদ সংযোজন করে রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ক্ষতি করা হয়েছে।
অভিযানের সময় ঘুষের ৩৮ লাখ টাকার লেনদেন ও নথি হস্তান্তরের রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়। প্রাথমিক যাচাইয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, এবং এনফোর্সমেন্ট টিম শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবে।
এনবিআরের তথ্য
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সালাহ উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে আয়কর ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন। কর ফাঁকি সংক্রান্ত আপিল, ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টেও তিনি কখনো রায় পাননি। এরপরই তার আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকার কর সার্কেলের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কোটি টাকার ঘুষ চুক্তি করে বাড়তি সুবিধা নেন।
ঘুষের টাকা পরিশোধের পর সার্কেল থেকে পুরো ফাইল আইনজীবীর চেম্বারে নিয়ে ১২ করবর্ষের পুরোনো রিটার্ন পরিবর্তন করা হয়। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিটের তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসে।
ব্যাংক হিসাব জব্দ
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ১ সেপ্টেম্বর জান্নাতুল ফেরদৌস মিতুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অন্যদিকে করদাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং আয়কর আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।