প্রতিবেদক- ব্যুরো চিফ মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী।
নারায়ণগঞ্জ শহর যেন আজ এক অচল নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটের ভয়াবহতা মানুষকে যেন শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলছে। ৫ মিনিটে দূরত্ব অতিক্রম করতে লাগছে ঘন্টার পর ঘন্টা এর সঙ্গে যোগ হয়েছে
বেহাল সড়ক, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, ব্যবহার অযোগ্য ফুটপাত, হকারদের দখলদারিত্ব এবং মশার প্রকোপ। ফলে নগরজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
এ অবস্থায় নগরবাসীর ভরসার শেষ ঠিকানা মানবতার জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবং নবাগত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন। কারণ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে নেই কোনো জনপ্রতিনিধি, না মেয়র, না কাউন্সিলর। ফলে নাগরিক সমস্যা সমাধান থেকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত দায়িত্ব এখন অনেকটাই তাদের কাঁধে এসে পড়েছে। সাধারণ মানুষের আশা, নবাগত ডিসি ও এসপি যদি আন্তরিকতা এবং কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করেন, তবে এই নগরীর ‘ বিশৃঙ্খল চিত্র বদলানো সম্ভব।
শহরের প্রধান সড়কগুলো আজ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আদমজী-চাষাড়া সড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটার জুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। বিশেষ করে একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল করা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুঃসাধ্য। চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি এবং চানমারী পর্যন্ত লিংক রোডেও একই অবস্থা। অথচ এসব সড়কের দুপাশেই রয়েছে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ইপিজেড, র্যাব সদর দপ্তর থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সড়কগুলো দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত হকারদের দখলে থাকলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়েনি। পথচারীরা বাধ্য হয়ে সড়কে নেমে চলতে গিয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন, আর সড়কের একটি অংশ দখল হয়ে থাকায় যানজট আরও প্রকট হচ্ছে। যানজটের পাশাপাশি শহরে যততত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ স্ট্যান্ড, রুট পারমিট ছাড়া যানবাহনের দৌরাত্ম্য এবং অবৈধ রিকশার ছড়াছড়ি পরিস্থিতিকে চরমে পৌছে দিয়েছে। শহরবাসীর আরেক যন্ত্রণা মশার উপদ্রব। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ও অলিগলি তলিয়ে যাওয়ায় প্রজননক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে মশার, আর এতে প্রতিদিনই ভোগান্তি বাড়ছে।
এক সময় নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি ছিল প্রবল। উন্নয়নের ফুলঝুরি শোনালেও বাস্তবে মানুষ পায়নি প্রত্যাশিত পরিবর্তন। এখন তাদের অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ সরাসরি তাকিয়ে আছে প্রশাসনের দিকে। তাদের প্রত্যাশা একটাই ডিসি ও এসপির দৃঢ় ভূমিকার মাধ্যমে শহরে আবারও শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। যানজট কমুক, সড়ক হোক চলাচলযোগ্য, ফুটপাত ফিরুক পথচারীদের দখলে, শহর হোক পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য। প্রশাসনের সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপই পারে নারায়ণগঞ্জকে আবারও একটি প্রাণবন্ত শহরে পরিণত করতে। আর তাই নগরবাসীর চোখ এখন একটাই প্রশ্নে আটকে আছে “ডিসি ও এসপি কবে নামবেন অ্যাকশনে?”