স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা আর পরনির্ভর হতে চাই না। আমাদেরকে স্বনির্ভর হতে হবে। এখন যেহেতু পরনির্ভর হয়ে আছি, এর থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর বাইরে আর কোনো কথা নাই।”
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে প্রণীত মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস হচ্ছে বাইরের সাহায্য ও সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে চলা। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে সেই জায়গা আর নেই। আত্মনির্ভর হতে গেলে আমাদের অভ্যাস বদলাতে হবে, নিজের বুদ্ধি খাটাতে হবে, পরিশ্রম ও লড়াই করতে হবে। এটা কঠিন হলেও এই কাজে আনন্দ আছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, সেই নতুন বাংলাদেশ মানেই হচ্ছে স্বনির্ভর বাংলাদেশ।”
তিনি আরও বলেন, “এই জাতির যথেষ্ট ক্ষমতা আছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। তারুণ্য ও সৃজনশীলতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তি ও সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলে জাতিকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আর কারো দাস হয়ে থাকতে চাই না।”
সভায় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রা এখন এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে—এ সময় সাহসী সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় সক্ষমতা বাড়ানোই হতে পারে টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, কৃষি উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, রপ্তানি, কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি ও সেবা খাতকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে বিদেশি সহায়তা ছাড়াই উন্নয়ন টেকসই হয়। নতুন প্রজন্মকে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে হবে—তাদের উদ্ভাবন, কর্মস্পৃহা ও উদ্যোক্তা মনোভাবই হতে পারে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চালিকাশক্তি।
সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে এখনই এগিয়ে যেতে হবে।”