সোনারগাঁয়ে বিএনপির অনেক হিসেব-নিকেস

প্রতিবেদক- ব্যুরো চিফ মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ করে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনকে কেন্দ্র করে বেশ আলাপ আলোচনা সরগরম রয়েছে। সেই সাথে অনেক প্রভাবশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী সোনারগাঁ এলাকাকে ঘিরে সরব রয়েছেন। ফলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক হিসেব-নিকেস চলছে। বিশেষ করে নতুন করে আসন পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে হিসেব-নিকেস আরও অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়েছে। বিএনপি দলীয় দুইটি আসনের সোনারগাঁয়ে বিএনপির অনেক
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একটি আসনের সাথে মিলিত হয়ে গেছেন। ফলে মনোনয়নের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে টিকে থাকবেন সেটাই পরিলক্ষিত বিষয় হিসেবে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে মনোনয়নে লড়াইয়ে যিনিই বিজয়ী হবেন তাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না। ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিলো না।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় একদম খালি মাঠে রয়েছে বিএনপি। আর এই খালি মাঠে বিএনপির অনেক নেতাই নতুন করে নিজেদের জানান দিতে থাকেন।
সেই সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। আর এই নির্বাচনী আলাপ আলোচনায় অনেকেই জায়গা করে নিতে থাকেন। কেউ নতুনভাবে আবার কেউ আগে থেকেই আলোচনা থাকায় সব মিলিয়ে বেশ সরগরম ছিলো নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসন।

এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। এই আসন পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও)
আসনের সাথে যুক্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী
কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. ওয়ালিউর রহমান আপেল।নারায়ণগঞ্জ-আসন থেকে যুক্ত হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তাদের মধ্যে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আগে থেকেই সোনারগাঁ এলাকায় সরব ছিলেন। সেই সাথে ধীরে ধীরে পদচারণা বাড়াতে থাকেন। স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না দিলেও তার কার্যক্রমে স্পষ্ট হতে থাকে তিনি সোনারগাঁ এলাকা থেকেও বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

সবশেষ আসন পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের অবস্থান স্পষ্ট নি হয়ে যায় তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ তথা সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচন করবেন। সেই সাথে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন তথা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় থাকা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদকেও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে যেতে হবে। তার বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ হওয়ায় তিনি চাইলেও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এড়াতে পারবে না।
তার আগে সাবেক এমপি রেজাউল করিম নতুন করে আলোচনা ছিলেন। সেই সাথে তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে আজহারুল ইসলাম মান্নান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই তার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আসছেন। নেতাকর্মীদের বিপদ আপদে পাশে দাঁড়িয়ে আসছিলেন। যে সময় বিএনপির অন্যান্য নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের ভুলে গিয়েছিলেন পরিচয় দিতেন না সে সময় মান্নান সর্বস্ব উজার করে দিয়েছেন। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এলাকায় মান্নান অন্যান্য নেতাদের চেয়ে ছিলেন। কিন্তু তার মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়েও অনেক হিসেব নিকেস করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *