ভোটের আগে সরকারের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে বিএনপির সতর্কবার্তা

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

 

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দলের অভিমত, কিছু উপদেষ্টা সরকারের কার্যক্রমে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় বিশেষ একটি দলের লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। নেতারা মনে করেন, এতে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থ বিপন্ন হতে পারে।

সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হবে। পাশাপাশি, দু-একদিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যাবে। সেখানে তারা প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনকে উদ্বেগের বিষয়গুলো অবহিত করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন।

বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নেতারা মনে করেন, কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য ও কার্যক্রম সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে। প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল ও পদায়নও পক্ষপাতমূলকভাবে হচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর লোকদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবরের মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত রাখতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। গত ২ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল প্রস্তুত করতে হবে। প্যানেলে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক-বিমা থেকে শ্রেণি বা গ্রেডভিত্তিক কর্মকর্তা-কারচারীর তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।

বৈঠকে নেতারা বলেন, সারা দেশে যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত হচ্ছে, তার অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরে সম্পৃক্ত এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থি। এতে নির্বাচনে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক হয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া উচিত।

বৈঠকে নেতারা ৫ আগস্টের পরে প্রশাসনে যে রদবদল বা পুনর্বিন্যাস হয়েছে, তাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, একটি দলের লোকজনকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়নি। এছাড়া বিএনপি মনে করছে, বিগত প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এখনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, এবং নতুনভাবে আরও একটি বিশেষ দলের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে।

বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১৭ অক্টোবর সনদ স্বাক্ষরের দিনে শতাধিক নেতার সমন্বয়ে গঠিত বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সনদে স্বাক্ষর করবেন।

এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। মাঠ পর্যায়ে দলের প্রচার কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে বলে নেতারা মনে করছেন। এজন্য মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীলভাবে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করা হয়েছে।

বৈঠকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন ন্যারেটিভের মাধ্যমে এ অপপ্রচার মোকাবিলা করার উপায়, এবং দলের প্রচার-প্রচারণা জোরদার করার কৌশল নিয়ে নেতারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন আসন্ন এবং আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভোট নেওয়া সরকারের লক্ষ্য। তাই প্রশাসন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন পক্ষপাত বা অনিয়ম প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *