দেশের গর্ব সৈনিক ও ক্রীড়াবিদ মোঃ জমির উদ্দিন রনি: দায়িত্ব, সাফল্য ও সততার অনন্য উদাহরণ

মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার :

দেশের পতাকাকে বিশ্বের বুকে উঁচুতে তুলে ধরার অদম্য ইচ্ছা থেকেই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক মেধাবী, দেশপ্রেমিক ও দৃঢ়চেতা তরুণ — মোঃ জমির উদ্দিন রনি। একাধারে তিনি একজন দায়িত্বশীল সৈনিক, অপরদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী এক গর্বিত ক্রীড়াবিদ।

২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর তিনি বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন আনসারে যোগদান করেন। বর্তমানে আনসার একাডেমি গাজীপুরের সফিপুর ক্রীড়া শাখায় কর্মরত রয়েছেন। দায়িত্ব ও কর্তব্যে তিনি যেমন নিষ্ঠাবান, তেমনি দেশ ও বাহিনীর সুনাম রক্ষায় তাঁর ভূমিকা অনন্য। সৈনিক হিসেবে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস — “একজন সৈনিকের সবচেয়ে বড় গর্ব তার দায়িত্বে সততা, শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেম। আমি অস্ত্র হাতে যেমন দেশের জন্য লড়ি, তেমনি মাঠে দেশের পতাকা উড়াতে লড়াই করি খেলোয়াড় হিসেবে।”

রনির ক্রীড়াজীবনও সমান গৌরবময়। ২০১৮ সালে বি কে এস পি আন্তর্জাতিক কাপে তিনি গোল্ড মেডেল অর্জন করেন এবং একই বছর জাতীয় পর্যায়েও স্বর্ণপদক জয় করেন। এরপর অংশ নেন আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত জুডো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে, যেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেন। ২০১৯ সালে অংশগ্রহণ করেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে, এবং ২০২০ সালে এশিয়ান কাপে।

এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০টিরও বেশি স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্রপদক অর্জন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের অন্যতম সফল জুডোকা হিসেবে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য — ২০১৮ সালের বি কে এস পি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচে তিনি “সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি” অর্জন করেন, যা বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক গর্বের অর্জন।
রনি ২০১০ সালে ছাতক মুক্তিরগাঁও দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, ২০১২ সালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম এবং ২০১৫ সালে ফাযিল সম্পন্ন করেন।

তিনি সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার তুলারবন্ধ গ্রামের কৃতী সন্তান। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল ওয়াহিদ এবং মাতা চমক তারা বিবি। দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলার মন্ত্রে গড়া এই সৈনিক সর্বদা বিশ্বাস করেন — সততা ও ত্যাগই একজন প্রকৃত সৈনিকের পরিচয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে “বিদেশে ড্রাইভিং ভিসা দেওয়া হবে” — এমন বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে একদল প্রতারক সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে।

অনেকেই ভুলবশত রনির ব্যক্তিগত ওয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাঠাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোঃ জমির উদ্দিন রনি বলেন — “আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে কে বা কারা প্রতারণা করছে, আমি জানি না। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই — এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

যদি কারো কাছে এমন কোনো ভিডিও বা লিংক আসে, দয়া করে আমাকে দিন, আমি নিজেই আইনি ব্যবস্থা নেব।

এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ প্রতারক চক্রের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে পরিচিত ব্যক্তিদের নাম, ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে প্রতারণার প্রবণতা বাড়ছে। তাই তথ্য যাচাই না করে কোনো প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপনে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বর্তমানে ভুক্তভোগী সৈনিক রনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন এবং প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

নিজ দায়িত্বে সততা, খেলায় দক্ষতা, আর জীবনে শৃঙ্খলার সমন্বয়ে মোঃ জমির উদ্দিন রনি আজ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এক প্রেরণার প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করেন — দেশপ্রেম, পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। সততা দিয়ে দায়িত্ব পালনই একজন প্রকৃত সৈনিক ও ক্রীড়াবিদের পরিচয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *