স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, বর্তমান সরকার এবং পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচন বানচাল হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।”
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাশেদ খাঁন এসব কথা বলেন।
রাশেদ খাঁন বলেন, “নানাভাবে, নানা পন্থায় দেশের ওপর আরেকটি ১/১১ সরকার গঠনের চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে এবং ফ্যাসিবাদকে দেশে ফিরে আসতে না দেওয়ার জন্য বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে বাংলাদেশে পুনরায় ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হবে। তাই বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান—আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। কিন্তু যদি আমরা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হই, একে অপরকে ক্ষতি করি এবং হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত হই, তাহলে যারা স্বাধীনতা ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল—যেমন আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম—তাদের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে।”
রাশেদ খাঁন জাতীয় সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, “বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গঠনের জন্য জাতীয় সরকারের বিকল্প নেই। যেহেতু আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তাই নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের আদলে রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দলের সকল নেতা ও সংগঠনকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাই। আমাদের লক্ষ্য দেশের জন্য সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ প্রশাসন নিশ্চিত করা।”
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, এবং এই যৌথ পদক্ষেপের কারণেই আন্দোলন সফল হয়েছে। রাশেদ খাঁন বলেন, “এখন আমাদের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গঠন করা, রাজনৈতিক সংস্কার করা এবং বিচারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেওয়া। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাতীয় সরকার কার্যকরভাবে কাজ করবে। আগামী নির্বাচনের পূর্বে এবং পরে আমাদের সবাইকে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়।”
রাশেদ খাঁন আরও বলেন, “বাংলাদেশকে এক সুসংহত, গণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। ক্ষমতার লিপ্ততা বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে ক্ষতিকর। তাই আগামী নির্বাচনের আগে সকল রাজনৈতিক দলকে নিজেদের কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে এককভাবে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের সকল রাজনৈতিক দলের কর্তব্য। এছাড়া ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসার যে ঝুঁকি রয়েছে, তা প্রতিরোধ করতে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু সেটা হবে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও জনমুখী। এই প্রক্রিয়ায় দেশের সংখ্যালঘু, যুবক ও সমাজের দুর্বল শ্রেণি নিরাপদ থাকবে।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা সকলেই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাশেদ খাঁন সমাবেশে পুনরায় সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচন এবং রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় আমাদের সকলের যৌথ সহযোগিতা অপরিহার্য। দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংহতি বজায় রাখতে হবে।”