স্টাফ রিপোর্টার :
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য চাওয়ায় দুই সাংবাদিকের নামে চুরির মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দিয়ে— এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
জানা গেছে, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলাদেশ বুলেটিন-এর নিজস্ব প্রতিবেদক ও আশুলিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম হাওলাদার সাকিব এবং সকালের সময় পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি সুফি সুমনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার পরই তড়িঘড়ি করে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়, কোনো প্রাথমিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই।
মামলার বাদী হিসেবে নাম এসেছে অ্যাডভোকেট নাছরীন আক্তার-এর, যিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী ও ঢাকা জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন।
সূত্র জানায়, সাংবাদিক সাকিব ও সুফি সুমন সম্প্রতি ওসি আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে জমি দখল ও আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নাছরীন আক্তারের নামও সংশ্লিষ্ট কিছু অভিযোগে উঠে আসে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উল্টো দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চুরি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে মামলা করেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক সুফি সুমন বলেন,
আমরা নাছরীন আক্তারের বিরুদ্ধে ভূমি দখল ও জালিয়াতির অভিযোগ যাচাই করছিলাম। তথ্য জানতে চাওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করেছেন। এটি স্পষ্টভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা বন্ধ করার অপচেষ্টা।
একই অভিযোগ করে সাংবাদিক আসলাম হাওলাদার সাকিব বলেন,
মামলার বাদীর সঙ্গে আমার কখনো দেখা বা যোগাযোগ হয়নি। ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মামলা এজাহারে যে তারিখ ও সময় দেওয়া হয়েছে, সেটি সরকারি ছুটির দিন। আমার মোবাইলের লোকেশন বের করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে আমি তখন বাসায় ছিলাম।
তিনি আরও বলেন,
নাছরীন আক্তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন। তার সঙ্গে ওসির সখ্যের কারণেই তদন্ত ছাড়াই এই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে অভিযুক্ত নেত্রী অ্যাডভোকেট নাছরীন আক্তার সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
আমি আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলা করেছি। নতুন মামলার বিষয়ে যেখানে থেকে তথ্য পেয়েছেন, সেখানে যোগাযোগ করুন।
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওসি আব্দুল হান্নানকে পাওয়া যায়নি। তবে থানার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. আজগর হোসেন বলেন,
আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না, অফিসিয়াল অনুমতি নেই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন,
আমি নিজে কিছুটা তদন্ত করেছি। কিছু তথ্য সত্য মনে হওয়ায় মামলা রেকর্ডের অনুমতি দেওয়া হয়। আসামিরা সাংবাদিক কিনা, তা নিশ্চিত ছিলাম না।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে আশুলিয়া থানায় অ্যাডভোকেট নাছরীন আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন, যেখানে সাংবাদিক সাকিব আসলাম ও সুফি সুমনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ বলছে, এই মামলা শুধুমাত্র ভয় দেখানোর কৌশল, যা মুক্ত সাংবাদিকতার পরিপন্থী।