রূপগঞ্জে ‘সিনেমাটিক স্টাইলে’ অস্ত্রের মুখে বাইক ডাকাতির মূলহোতা তৈয়বুর–রানা গ্রুপের দুই প্রধান গ্রেফতার

মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠা বাইক–ডাকাতির পেছনের মূলহোতা ‘তৈয়বুর–রানা গ্রুপে’র দুই প্রধান তৈয়বুর (২৩) ও রানা (২৮)কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব–১১ ও র‍্যাব–০২-এর একটি যৌথ আভিযানিক দল। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাজুড়ে চলা সশস্ত্র ছিনতাই, জিম্মি করে মোটরসাইকেল ছিনতাই এবং ব্লগার–বাইক রাইডারদের ওপর হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সাধারণ মানুষের মাঝে। অবশেষে গোয়েন্দা নজরদারি ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রের দুই মূল পরিকল্পনাকারী র‍্যাবের হাতে ধরা পড়ে।

র‍্যাব জানায়, ৩ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে ডিএমপি’র হাজারীবাগ থানাধীন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান চালানো হয়। পূর্ব প্রস্তুতি, গোপন তথ্য এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার ভিত্তিতে যৌথ র‍্যাব দল সেখানে অবস্থান করে। পরে অভিযান বর্ণিত সময় ও স্থান থেকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার দুই কুখ্যাত আসামি—
১) তৈয়বুর (২৩), পিতা জাকারিয়া, সাং—ঝাউগড়া
২) রানা (২৮), পিতা আমান উল্লাহ, সাং—বরদা
—তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই যুবকরা ঘুরতে যান। রাজধানীর ব্যস্ততা থেকে বেরিয়ে সড়কটিতে মোটরসাইকেল চালাতে অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল সশস্ত্র ডাকাত দলের একটি বড় চক্র।

তৈয়বুর–রানা গ্রুপ তারই একটি ভয়ংকর শাখা।
তারা মোটরসাইকেল থামিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে, কখনও গুলি ছুড়ে, কখনও হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিত।
পাঁচরুখী এলাকায় সম্প্রতি গুলিবর্ষণসহ বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনাও এ চক্রের কাজ।

এছাড়া ব্লগার জিসানের ওপর ‘সিনেমাটিক স্টাইলে’ বাইক ডাকাতির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল আরোহীকে ঘিরে ধাওয়া, লেজার লাইট, চমকে দেওয়ার মতো আচরণ—যা চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মতোই ছিল।

সাম্প্রতিক আলোচিত ছিনতাইয়ের পর র‍্যাব–১১ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। গোপন সূত্রে জানা যায়, এসব ঘটনাগুলোর পেছনে একই চক্রের সক্রিয়তা—তৈয়বুর–রানা গ্রুপ।
গোয়েন্দারা তাদের অবস্থান, চলাফেরা এবং সহযোগীদের ওপর নজরদারি চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হলে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ধরা হয়।

গ্রেফতার হওয়া দুইজনের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাই ও সশস্ত্র ডাকাতির মামলা রয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ৩০০ ফিট এবং আশপাশের এলাকায় অন্ধকার নামলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে বিভিন্ন ছিনতাই চক্র। পুলিশের টহল থাকলেও ডাকাতরা কৌশল পাল্টে হঠাৎ এসেই হামলা চালায়। ফলে বাইকার, সাধারণ পথচারী এবং পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মানুষ আতঙ্কে থাকে।

র‍্যাব জানিয়েছে, এই চক্রের আরও সদস্য চিহ্নিত আছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *