নারায়ণগঞ্জে আইভীর জামিন বাতিল, আইনজীবীর দাবি: বিচার ব্যবস্থায় অনিয়ম

মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী:

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে নতুন করে শোন অ্যারেস্ট দেখানো পাঁচটি মামলার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে দুই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ থানা পুলিশের ওপর হামলা এবং ফতুল্লা থানার আলোচিত ইয়াসিন হত্যা মামলার শুনানি চলে জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদের আদালতে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন, যা আদালত কক্ষে উপস্থিত আইনজীবী ও আইভীর সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এজাহারে তাঁর নাম উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও জামিন না দেওয়া—এই বিষয়টি আইনজীবীরা বিশেষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।

শুনানি শেষে আইভীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দুই মামলার এজাহারে সাবেক মেয়র আইভীর নাম নেই, অথচ এর আগে একই মামলার এজাহারে নাম না থাকা আরও ১৯ জন আসামির জামিন আদালত মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু আইভীর ক্ষেত্রে ভিন্ন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, এই পার্থক্যপূর্ণ আচরণে স্পষ্টভাবে বিচার ব্যবস্থার ওপর অবৈধ প্রভাব কাজ করেছে বলে তাঁরা মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, একই মামলায় সহ-আসামিদের জামিন দেওয়া হলেও আইভীকে জামিন না দেওয়া সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে আস্থা কমিয়ে দেবে। তাই তাঁরা দ্রুত উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করবেন।

আইনজীবীরা আরও দাবি করেন, হাইকোর্ট আগেই পাঁচটি মামলায় আইভীকে জামিন দিয়েছেন। কিন্তু এরপর নতুন করে আরও পাঁচটি মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়েছে, যেগুলোর কোনোটাতেই তাঁর নাম ছিল না। বিশেষ করে ইয়াসিন হত্যা মামলার এজাহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে—এই হত্যাকাণ্ডে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি চালানোর ঘটনায় শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানের নাম রয়েছে। সেখানে আইভীর নাম নেই, কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার অভিযোগও নেই। তাছাড়া আরেক মামলায় বলা হচ্ছে আইভী পুলিশের ওপর হামলা করেছেন, অথচ ঘটনার সময় তিনি পুলিশ কাস্টডিতেই ছিলেন। এই ঘটনাগুলোর কোথাও তাঁর নাম না থাকা সত্ত্বেও নতুন মামলা দিয়ে বারবার গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে, যা আইনজীবীদের ভাষায়—আইন ও বিচারব্যবস্থার সুস্পষ্ট অপব্যবহার।

আইনজীবীদের মতে, এমন আচরণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের অভিযোগ—আইভীর জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক অবস্থানকে চাপে রাখতে এবং তাকে হয়রানি করার লক্ষ্যে নতুন নতুন মামলা যুক্ত করা হচ্ছে। তারা বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরপরই আবার নতুন মামলা দিয়ে তাঁকে জড়ানো হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়।’ এ ঘটনায় বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও তাঁরা মন্তব্য করেন।

জেলা আদালত আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার পর তাঁর আইনজীবী দল উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের মতে, জেলা আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি, তাই উচ্চ আদালত থেকেই সুবিচার প্রত্যাশা করছেন। এদিকে জামিন না পাওয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সমর্থকদের অভিযোগ—ডা. আইভীকে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ অভিযোগগুলোর তদন্তকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছে। পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে আইভীর এই মামলাগুলো ও জামিন বাতিলের রায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *