মোহাম্মদপুরে কিরিচ-চাপাতি নিয়ে নৃশংস হামলা, সাংবাদিকসহ নারী-পুরুষ গুরুতর জখম

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নৃশংস রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিরিচ, চাপাতি, চাকু, লোহার রড ও লাঠি নিয়ে সংঘটিত এই হামলায় নারীসহ অন্তত আট জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যা সাতটা পনেরো মিনিটে মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার সুলতানগঞ্জ হাসেমখান রোডে। ভুক্তভোগী সাংবাদিক কুলসুম বেগম জয়ার বাসার সামনে পাকা রাস্তায় এই হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় সাংবাদিক কুলসুম বেগম জয়া মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তার আপন ভাই মো. আনোয়ার হোসেন (৫৫), ভাবি মোছা. হাজেরা বেগম রুবি (৩৮), ভাতিজা মো. রাহিম হোসেন বিশাল (২২) ও মো. তামিম হোসেন (১৬), ভাবির ভাই মো. মামুন হোসেন বাবু (৪২) ও মো. আবুল হোসেন (৪০) এবং তাদের সঙ্গে থাকা ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ঘটনার বিবরণ:
বাদির ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার শুরু বাসার ভেতরে কথা কাটাকাটির মাধ্যমে। পরে তিনি ও তার দুই বোন বাইরে বের হলে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রসহ দলবদ্ধভাবে তাদের পথরোধ করে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়।

সাংবাদিক কুলসুম বেগম জয়ার ডান চোখের নিচে কিরিচের কোপে তিন ইঞ্চি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, যেখানে সাতটি সেলাই দিতে হয়। মাথার পেছনে চাপাতির কোপে আরও পাঁচটি সেলাই লাগে। তার বোন অধ্যাপক বিবি রহিমার মাথার পেছনে একাধিক কোপে গভীর ক্ষত হয় এবং মুখে চাকুর আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। ছোট বোন হারিছা বেগমের মুখের বাম পাশে চাকুর আঘাতে প্রচুর রক্তপাত হয়।

হামলায় বড় ভাবি কানিজ ফাতেমা ও দুলাভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামও গুরুতর জখম হন। পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে এগিয়ে এলে ভাগ্নে হাসিবুল ইসলামকেও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বৃদ্ধা মা জাকিয়া বেগম বাধা দিতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার পর থেকেই অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

লুটপাট ও সম্পত্তি ধ্বংস:
হামলার একপর্যায়ে অভিযুক্তরা বাদির ব্যাগ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং প্রায় ১০ আনা ওজনের দুটি স্বর্ণের কানের দুল, যার আনুমানিক মূল্য এক লাখ টাকা, লুট করে নেয়। পাশাপাশি নির্মাণাধীন দেয়াল ভেঙে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করা হয়।

চিকিৎসা ও আইনি পদক্ষেপ:
আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনীয় মেডিকেল কাগজপত্র ও আলামত সংযুক্ত করে থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, “অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বর্তমানে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *