স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা জাতির স্মৃতিতে চিরকাল অম্লান থাকবে। এসব অবদান বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। তার আপোষহীন নেতৃত্ব বহুবার গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্তির পথে অনুপ্রাণিত করেছে। দেশ ও জাতির প্রতি তার অবদান ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।
রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় রাজনীতিতে পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ, পরীক্ষিত ও প্রভাবশালী রাজনীতিককে হারাল।
শোকবার্তায় আরও বলা হয়, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতন ঘটে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বহু সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ দেশকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অত্যন্ত সফল। তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে এবং ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি আসনেই তিনি বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলেন।
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই তাকে চরম প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি রাখা হয়।
শেষে প্রধান উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে দেশবাসীকে শান্ত থাকার, ধৈর্য ধারণের এবং যার যার অবস্থান থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।