স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর মালিবাগের আবুজর গিফারী কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ দুপুর ২ ঘটিকায় আবুজর গিফারী কলেজের শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধি এবং কলেজের ম্যানেজিং কমিটির একাংশ সম্মিলিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক, সহযোগী অধ্যাপক ও আবুজর গিফারী কলেজের সভাপতি মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগীরা বলেন, মালিবাগ আবুজর গিফারী কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি জনাব মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর মারাত্মক অসৌজন্যমূলক ও রূঢ় আচরণ, বিভিন্ন অনিয়মকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, কলেজের প্রশাসনিক কাজে প্রতিনিয়ত অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ, শিক্ষকদের মাঝে গ্রুপিং ও কোন্দল সৃষ্টি, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কলেজের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা, স্বৈরাচারের দোসর ও কলেজের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের সাথে পরামর্শক্রমে কলেজের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছি।
সভাপতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে—না চললে চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দেন। এডহক কমিটির মেয়াদের শেষ দিন অর্থাৎ ১০ মার্চ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে সভাপতির একক সিদ্ধান্তে কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়কে সাময়িক অব্যাহতি দেন এবং উপাধ্যক্ষকে তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পণ করেন, যা পুরোপুরি অবৈধ। উপাধ্যক্ষ মহোদয় চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির লোভে পড়ে সভাপতির নির্দেশে অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এডহক কমিটির ০৯/০৩/২০২৫ তারিখের সভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকল সদস্য উপস্থিত হলে সভাপতি মহোদয় দাতা সদস্যকে তার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেন এবং তিনি সভা করবেন না বলে জানান।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সভাপতি মহোদয় সভা আহ্বান করেননি। আর যখনই সভা আহ্বান করা হলো তখন সভাপতির অনুকূলে থাকা আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের অনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে সভা আহ্বান করায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বডির ৬ জন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। বিধি মোতাবেক ৬ জন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম হওয়ার কথা কিন্তু তারা নিয়ম না মেনে পাঁচজন সদস্য নিয়ে সভা পরিচালনা করেন। এমতাবস্থায় সভা অনুষ্ঠান অবৈধ হলেও সভাপতি মহোদয়, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত), বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও দুজন শিক্ষক প্রতিনিধি সভা সম্পন্ন করে আরেকজন সংরক্ষিত নারী সদস্যের বাসায় উপস্থিত হয়ে তাকে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
উল্লেখ্য যে, সংরক্ষিত নারী শিক্ষক সদস্য অসুস্থতাজনিত কারণে সভায় অনুপস্থিতির অনুমতি দেওয়ার পরও সভাপতি মহোদয় এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্য আলী মোহাম্মদ কাওসার তাকে উপস্থিত হতে জোর করেই ক্ষান্ত হননি, তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধের হুমকি দেন।
এডহক কমিটির প্রতিটি সভায় যোগদানের জন্য সভাপতির সম্মানী ৬০০০/- টাকা এবং অন্যান্য সদস্যবৃন্দের জন্য জনপ্রতি ৩০০০/- টাকা নির্ধারিত ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সভাতেই সম্মানী বাড়িয়ে ৬০০০/- টাকা থেকে ২০০০০/- টাকায় উন্নীত করার জন্য অধ্যক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। অধ্যক্ষের অনুরোধক্রমে পরে তা ১২০০০/- টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য ও দুর্নীতির সামিল।
তাছাড়া বিদ্যোৎসাহী সদস্যের সম্মানী ৩০০০/- টাকা থেকে ৮০০/- টাকায় নির্ধারণ করা হয়। উল্লেখ্য, গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্যবৃন্দের সম্মানী বৃদ্ধি না করে তা পূর্বনির্ধারিত ৩০০০/- টাকাই রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন কলেজের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে এডহক কমিটির সদস্যদের সম্মানীর ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে যোগদানের ৫ (পাঁচ) মাসের মধ্যে তিনি এডহক কমিটির ৯ (নয়) টি সভা করেছেন এবং আরও সভার জন্য অধ্যক্ষ মহোদয়কে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। আরও উল্লেখ্য যে, জরুরি অবস্থা ছাড়াই জরুরি সভা আহ্বান করেন যা অস্বাভাবিক ও অপ্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র সম্মানী প্রাপ্তির লক্ষ্যে তিনি ঘন ঘন সভা করেছেন। ফলে কলেজের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এডহক কমিটির সভা কলেজ প্রাঙ্গণে না করে সভাপতি মহোদয় নিজ ক্ষমতাবলে, বিধিবহির্ভূতভাবে সদস্যদের অসম্মান করে কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবের বারান্দায়, কখনও মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে সভা করেন। কমিটির অনেক সদস্য এ বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করলে তিনি তা অগ্রাহ্য করেন, যা তার স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর।
কলেজের মূল রেজুলেশন খাতা অধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে সভাপতি মহোদয় নিজ জিম্মায় নেন। এমনকি ব্যাংকে পরিচালিত কলেজের মাদার একাউন্টের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য SMS এর মাধ্যমে অধ্যক্ষের মোবাইল নম্বরে অবহিত করার নিয়ম প্রচলিত থাকলেও উক্ত তথ্যাদি অধ্যক্ষের পরিবর্তে সভাপতির মোবাইল নম্বরে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি অধ্যক্ষকে বাধ্য করেন, যা সভাপতির এখতিয়ার বহির্ভূত এবং স্বেচ্ছাচারিতার আরেকটি উদাহরণ।
নবীন বরণের মতো অনুষ্ঠানকেও বানচাল করেছেন একজন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষককে কমিটিতে রাখার জেদ করে। ঐ শিক্ষক ৩ আগস্ট ২০২৪ গণভবনে গিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সভায় যোগ দেন। উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে নিরীক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষের রুমসহ আরও কিছু রুমে অডিও রেকর্ডসহ সিসি ক্যামেরা নতুন করে স্থাপন করেন এবং কলেজের সমস্ত সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন, যা সভাপতির এখতিয়ার বহির্ভূত। কলেজের প্রশাসনিক কাজে প্রতিনিয়ত তিনি অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করেন। কলেজের শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন, গভর্নিং বডিতে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে নগ্নভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষকদের মাঝে গ্রুপিং ও কোন্দল সৃষ্টি করেছেন। ফলশ্রুতিতে কলেজের একাডেমিক কর্মকাণ্ড চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
তাছাড়া স্বৈরাচারের দোসর ও কলেজের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের সাথে পরামর্শক্রমে তিনি কলেজের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
সভাপতি মহোদয় কতিপয় সাধারণ শিক্ষকদকে সাক্ষাতের জন্য অবাধ যাতায়াতের প্রশ্রয় দেন। যেসব শিক্ষকের নিয়মিত যাতায়াত আছে, শুধুমাত্র তাদের খুশি করার জন্য কোনো কোনো শিক্ষককে ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি রাখার নজিরও রয়েছে।
কলেজে CSE (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগ খোলার জন্য আবেদন ফাইল আটকে রেখেছেন অনৈতিকভাবে। এমনকি কলেজ গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি, অর্থ পরিষদ ও হিসাবরক্ষকের সম্মুখে প্রায়শই সভাপতি সাহেব বলেন, “আপনাদের কাজ করে দিলে আমার কী লাভ?”
এমতাবস্থায়, শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দের বেতন বন্ধের হুমকিতে কলেজ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং কলেজের সাবেক ছাত্রদল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কলেজের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।