আরব আমিরাতে বাংলাদেশ লেডিস ক্লাবের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন, প্রবাসে মাতৃভূমির সুবাসে রঙিন এক উৎসব

প্রতিবেদক, মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার :

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো বাংলাদেশ লেডিস ক্লাবের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত ৪ অক্টোবর (শনিবার) আজমানের উম্মে আল মুমিনীন ওমেন’স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে এ বর্ণাঢ্য আ

য়োজন। আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে শতাধিক প্রবাসী নারী-পুরুষ ও পরিবার অংশ নেন অনুষ্ঠানে। মুহূর্তেই যেন প্রবাসের মাটিতে গড়ে ওঠে এক টুকরো বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণটি ছিল যেন এক বর্ণাঢ্য মেলার আবহে ভরপুর। দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যে সাজানো মেলায় স্থান পায় জামদানি, কাতান, হাতে আঁ

কা শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, হস্তশিল্প, পুঁতির কাজ ও নানা ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্টল। এছাড়া ছিল পিঠা-পুলি, চাটনি, খিচুড়ি, বিরিয়ানি, ফুচকা ও দেশীয় খাবারের পসরা—যা প্রবাসীদের মনে জাগিয়ে তোলে মাতৃভূমির মমতা ও স্বাদ।
দীর্ঘ সাত বছরের সফল পথচলার স্মরণে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও উদ্যোক্তাসহ ২৫ জন বিশিষ্ট নারীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরপর কেক কেটে উদযাপন করা হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দঘন মুহূর্ত। আয়োজনে ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, লোকনৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করে তোলার যে প্রয়াস বাংলাদেশ লেডিস ক্লাব নিয়ে কাজ করছে—তা উপস্থিত সবার মন কেড়ে নেয়।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা লিজা হোসেন ও উপদেষ্টা শরিফা সৈনিক। সভাপতিত্ব করেন লাবন্য আদিল, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন তন্বী সাবরিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শারমিন রাখী, সাথী আলী, তাকিয়ে সুলতানা, জারা খান, নাসরিন আক্তার, মহেসিনা সুলতানা তানিয়া, নাসরিন সুলতানা, নুসরাত সামী, ফাতিমা আহাদ, নাজমুন নাহার বুবলী, নাজ নাজমা সহ আরও অনেকে।

সভাপতি লাবন্য আদিল বলেন, “আমরা চাই প্রবাসে বাংলাদেশের নারীদের জন্য বাংলাদেশ লেডিস ক্লাব হোক এক নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়াবে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে।” তিনি আরও বলেন, “সাতটি বছর পার করা আমাদের জন্য গর্বের। এই সফলতার পেছনে ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা অনস্বীকার্য।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুবাই প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা সেলিম আহমেদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, “আমরা যারা প্রবাসে আছি, তাদের জীবনে এই ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের বাঁচিয়ে রাখে দেশের মাটির গন্ধে। পরিবার থেকে দূরে থেকেও এমন আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা এখনো বাংলাদেশেরই অংশ—বাংলাদেশ আমাদের হৃদয়ে।”
রাত গভীর পর্যন্ত প্রবাসী নারীদের হাসি, গানে আর আলোকিত মুখে ভরে ওঠে আজমানের আকাশ। বাংলাদেশ লেডিস ক্লাবের এই আয়োজন শুধু বিনোদন নয়—বরং প্রবাসে থেকেও কিভাবে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও নারী ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠা যায়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *