উত্তরায় একাধিক আবাসিক হোটেলে মাদক, জুয়া ও নারী দেহ ব্যবসা মূল হোতা আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ সাজ্জাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

ঢাকা সিটির উত্তরা হোসাইন টাওয়ারের উপরে ‘হোটেল রয়েল ব্লু’, হাউজ বিল্ডিংয়ের উত্তর পাশে ‘হোটেল নাইস ব্লু’ এবং ‘পল ওয়েল মার্কেট’-এর উপরে দীর্ঘদিন যাবত অসামাজিক কার্যকলাপ—মাদক, জুয়া খেলা এবং নারী দেহ ব্যবসা চলছে। প্রশাসন সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে। এলাকায় অপরাধের হার দিন দিন বাড়ছে।

এসব হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে এসি ও নন-এসি কক্ষে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। এতে যুক্ত করা হয় একটি বা দুটি মোবাইল নম্বর। ছোট করে হোটেল কক্ষের ছবি থাকে। কোনো কোনো কার্ডে গোলাপফুল বা ইন্টারনেট থেকে নামানো মেয়ের ছবিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু হোটেল বা গেস্ট হাউজের সঠিক ঠিকানা উল্লেখ থাকে না, শুধুমাত্র এলাকার নাম লেখা থাকে। কোনো কার্ডে লেখা থাকে—“আসার আগে ফোন দিন।”

কার্ডের সূত্র ধরে এক নম্বরে ফোন দিলে বলা হলো, “কতো দূর আছেন?” তিনি ফোনে ডিরেকশনও দিলেন, “সোজা উত্তরা আব্দুল্লাহপুর আসেন।”

তার কথামতো সেখানে গেলে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা কয়েকজন পিছু নেয়। কার্ডের নম্বরওয়ালা সে ব্যক্তি পুনরায় ফোনে বললেন, “এই যে, একটু ডানের বিল্ডিংয়ের দিকে তাকান।” তিনি জানালা দিয়ে হাত ইশারা করছেন। পৌঁছতেই ঘিরে ধরল অন্তত ছয়-সাতজন। তারা বলল, “ভাইয়ের কাছে যাবেন? আসেন।”

উপরে গেলে সেই কথিত ‘ভাই’ প্রশ্ন করলেন, “কেমন বয়সী মেয়ে চান? স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বা যা চান সব আছে।” বলেই তিনি পেছনে তাকালেন। সেখানে ১৫–২০ জন নানান বয়সী মেয়ে বসে ছিল। তিনি সরাসরি অফার করলেন—চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। চাইলে সারারাত থাকতে পারবেন।

জানতে চাওয়া হলো—প্রকাশ্যে আবাসিক হোটেলের কথা বলে এসব অসামাজিক কাজ চালাচ্ছেন। কেউ বাধা দেয় না? কার এত ক্ষমতা? উত্তরে জানানো হলো, “বড় ভাই আছে না।” তবে তারা সেই ‘বড় ভাই’-এর নাম প্রকাশ করেনি। তাদের ভাষ্যমতে, সব কিছুই ম্যানেজ করা থাকে। কার্ডে এসব ‘ভাই’দের আসল নামও দেয়া থাকে না। এরা প্রকৃতপক্ষে যৌনকর্মীদের দালাল। এভাবে হোটেলের নাম ব্যবহার করে যৌনকর্মীদের কাছে নিয়ে যায়। কখনো সরাসরি বাসায়ও সরবরাহ দেয়।

কার্ডে ঠিকানা না থাকার কারণ জানতে চাইলে জানানো হলো, “ঠিকানার দরকার পড়ে না। নিজেরাই গিয়ে নিয়ে আসি কাস্টমারদের।”

যুবকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল—তাদের কেউ বাধা দেয় কি না। বাবর নামের একজন বললেন, “কে বাধা দেবে?” বাবর যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন আরও পাঁচ-ছয়জন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হয়। বললেন, “এখান থেকে যান, ডিস্টার্ব করবেন না।” তাদের দাপট ভয়ঙ্কর। জুটে গেল আরও দশজন তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন এসে তাদের আশ্বস্ত করলেন, “এইখানে তোদের কেউ কিছু বলবে না, নির্ভয়ে কার্ড দিয়ে যা।”

তার কথা মতো বাবর ও কয়েকজন মিলে কার্ডগুলো ওভারব্রিজের দেয়ালে সাজাতে লাগলেন। এই কাজে ১০–১৫ বছর বয়সী কিশোরও জড়িত। অনেক যুবক ঢাকায় এসে এসব কার্ড বিলির কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে।

এদেরই একজন জানাল, কার্ড বিলির বিনিময়ে জনপ্রতি চার-পাঁচশ টাকা পান। অসুবিধা হলে ‘বড় ভাই’রা আশ্রয় দেয়।

এসব কার্ডে যাদের নাম উল্লেখ থাকে তারা মূলত দালাল। আর এই দালালদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রকৃত ব্যক্তিদের নাম কেউ প্রকাশ করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *