মোশারফ হোসেন জসিম পাঠান:
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন গড়াডোবা ইউনিয়নের রামপুরে অবস্থিত ৬০ নং জহুর বানু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠের করুণ চিত্র দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিদ্যালয়ের নাজুক অবস্থা এবং মাঠের বেহাল দশায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান ও খেলাধুলায় ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক পর্যন্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ অবধি বিদ্যালয়ের ভবনে কোনো ধরনের সংস্কার বা মেরামতের কাজ হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এই ভবন বর্তমানে এতটাই জরাজীর্ণ যে বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষ প্লাবিত হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ভিজে নষ্ট হচ্ছে এবং অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের মাঠও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠ কাদায় পরিণত হয়, ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্কুলের পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকরাও অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে।
পরিসংখ্যান বলছে, বিদ্যালয়ে গত বছর শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ২২০ জন, কিন্তু এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫৯ জনে। শিক্ষক সংকটও এই প্রতিষ্ঠানের একটি বড় সমস্যা। নিয়ম অনুযায়ী ৭ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক। তারা হলেন প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ নুরনাহার বেগম এবং সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম, মোঃ এমদাদুল হক ও মোঃ সালমানুর সোহাগ। শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনায় চরম সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ হলেও এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ স্কুল ও মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বাকি ১৫ শতাংশ জমি প্রতিবছর বর্গা হিসেবে স্থানীয় কৃষকের কাছে ধান চাষের জন্য দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে থাকে, যা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয়। তবে বিদ্যালয়ে পিয়ন, আয়া কিংবা নাইট গার্ড না থাকায় প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষিকা নুরনাহার বেগম বলেন, “বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কার, মাঠের উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ হলে শিক্ষার পরিবেশ অনেক উন্নত হবে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে এবং অভিভাবকেরাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।”
স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান, বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা দূর করতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত সংস্কার ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষক সংকট নিরসন জরুরি। তা না হলে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
এলাকাবাসীর একটাই প্রত্যাশা—জহুর বানু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠের উন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এতে শুধু বিদ্যালয়ের পরিবেশই সুন্দর হবে না, বরং শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থাও ফিরে আসবে।